ঈদগাঁও-খুটাখালীতে কাঠ পাচারের মহোৎসব

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ও পার্শ্ববর্তী খুটাখালী থেকে বন বিভাগের নাকের ডগায় প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার কাঠ ও লাকড়ী পাচারের মহোৎসব অব্যাহত রয়েছে। পাচারকারীদের দেয়া অবৈধ মাসোহারা আদায়ের ব্যস্ত থাকায় সরকারী বনজ সম্পদ রক্ষার মত যেন ফুসরত নেই বনকর্তাদের। এ অবস্থায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে ঈদগাঁও পার্শ্ববর্তী এলাকার অবশিষ্ট বনজ সম্পদ নিমিশেই উজাড় হয়ে যাবে বলে আশংকা সচেতন মহলের।
দৈনিক আমাদের কক্সবাজারের এক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ককসবাজার উত্তর বন বিভাগের (সদর) এরিয়ার সিংহভাগ বনজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা হচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁও ও পার্শ্ববর্তী ঈদগড় বাইশারী ও ফুলছড়ি বনভুমি। এ সম্পদ রক্ষার্থে ডজনাধিক বনবিট রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে ঈদগাঁও ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ, মেহেরঘোনা রেঞ্জ, ফুলছড়ি রেঞ্জ, মাছুয়াখালী বনবিট, নাপিতখালী বন বিট, রাজঘাট বনবিট,ধলিরছড়া বনবিট,ঈদগড়, বাইশারীর ৪ বনবিট, খুটাখালী বনবিট ও মেদাকচ্ছপিয়া বনবিট । সরকার স্ব স্ব বনবিট পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দিলেও অসাধু কর্মকর্তাদের রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া স্বপ্নই বনজদ্রব্যের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এসব কর্মকর্তারা সরকারী বেতন ভাতা ভোগের পর ও যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে বনখেকো চিহ্নিত ভুমি দস্যূদের আঁতাত করে বন বিট এলাকার নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট দিয়ে অদ্যাবধি হরদম মাসিক মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার কাঠ ও লাকড়ী তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে পাচারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, পাচারের পয়েন্ট গুলো হচ্ছে ভোমরিয়াঘোনা বনবিটের অধীন ঈদগাঁও ঈদগড় সড়ক, ঈদগাঁও নদী, ভাদীতলা সড়ক, গজালিয়া সড়ক,মেহেরঘোনা রেঞ্জের কলেজ গেইট সড়ক, কালিরছড়া,মাছুয়াখালী,ধলিরছড়া বনবিটের থলীয়ঘোনা, ঈদগড় বনবিটের অধীন ভেন্ডেবা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা, ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীন নতুন অফিস ভিলিজার পাড়া, নাপিতখালী বিটের অধীন, ডুলাফকির মাজার এলাকার রাজঘাট ও খুটাখালী সেগুন বাগিচা-পূর্বপাড়া সড়ক। এসব পয়েন্টে দায়িত্বরত বন কর্মকর্তারা সড়কে গাছের কল বসিয়ে বনজ সম্পদ রক্ষার নামে উল্টো পাচারের জন্য আনা কাঠ ও লাকড়ী ভর্তি গাড়ি পিচু নির্দিষ্ট হারে উৎকোচ আদায়ের জন্য এলাকার কিছু দালাল প্রকৃতির লোককে নিয়মিত বেতনে নিয়োজিত রেখেছে। এদের খুশি করতে পারলে অবৈধ সব কাঠ পাচার বৈধতা পেয়ে যায়। মুলত এসব দালালরাই স্ব স্ব এলাকার বনবিট গুলোকে নিয়ন্ত্রন করে বলে সূত্রে প্রকাশ।
বিশেষ করে চলতি মৌসুতে বৃহত্তর ঈদগাঁওর ইট ভাটা গুলোকে টার্গেট করে সন্ধ্যা নামলেই উক্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে বন বিভাগের যোগসাজসে লাখ লাখ টাকার অবৈধ কাঠ ও লাকড়ী ভর্তি চাঁন্দের গাড়ি, ডাম্পার ও ট্রাক গাড়ী গুলো প্রতিযোগিতা মুলক ভাবে সরকারী বনজ সম্পদ পাচারের উৎসবে মেতে উঠে। এসব যানের বেপরোয়া চলাচলে অনেক সময় সড়কের চলাচলকারী পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকার হন। কাঠ পাচারকারীরা মোটা অংকের টাকায় সংশ্লিষ্ঠ বিভাগকে ম্যানেজ করার পাশাপাশি স্থানীয় শক্তিশালী একটি মহলকে হাতে নিয়ে এ পরিবেশ বিধ্বংসে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চলতি ইট ভাটার মালিক ও সংশ্লিষ্ঠ বন কর্মকর্তাদের সাথে কাঠ পাচারকারীদের গোপনে মোটা অংকের লেনদেন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ প্রায় সম্পন্ন বলে জানা যায়। যার দরুন সরকারী বন কর্মকর্তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জন্য পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এসবের প্রতিবাদকারী স্থানীয় সচেতন জনসাধারণকে রহস্যজনক ভাবে বিভিন্ন সাজানো বন মামলায় হয়রানী করে আসছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
এলাকার সচেতন মহল বনজ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এসব দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের বদলী পূর্বক শাস্তির আওতায় এনে উল্লেখিত পয়েন্টগুলোতে বিশেষ ঝটিকা অভিযান পরিচালনার জন্য বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. শাহ-ই-আলম কাঠ পাচারের সাথে জড়িত বিট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।


শেয়ার করুন