ইসি এখন ‘হাসির পাত্র’: সুজন

Jpegসিটিএন ডেস্ক :
পৌরসভা নির্বাচনে দেদারছে ক্ষমতাসীনরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

উল্টো এসব বিষয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে কমিশনাররা ‘হাসির পাত্রে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে পৌর নির্বাচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দলের ২৩ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে নানা বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ‘হাসির পাত্রে’ পরিণত করেছে।’

বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন পূর্ব ব্যাপক সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। এ সংশয় নিরসনে নির্বাচন কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।’

দৃশ্যমান সহিসংতা ছাড়া অদৃশ্যমান নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা অনেকে ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেনা মোতায়েন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজদের দায়িত্ব সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে পালন করলে সেনা মোতায়েন ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, ভোটের দিন তাদের বেরই করা হয়নি। তাহলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কি লাভ? এতে করে সেনাবাহিনীর সুনাম আরো ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘প্রথমে নির্বাচন কমিশনকে ক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে।’

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনিয়মকারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন, প্রয়োজনে জেলে ঢোকান, অভিযোগ ওঠা দু-একজনের প্রার্থিতা বাতিল করুন এবং অনিয়ম ও অভিযোগ উঠলে নির্বাচন বন্ধ করুন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘ইসির কোনো তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ইসি জরিমানা ও উকিল নোটিশ দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ইসি কোনো ব্যবস্থা নিতে পিছিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এবারে পৌর নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি স্বরূপ। এই নির্বাচনে কমিশন ব্যর্থ হলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে তারা অক্ষম বলে প্রমাণিত হবে। যদিও এ যাবৎ গত হয়ে যাওয়া অনেক নির্বাচন নিয়ে ইসির বিতর্কিত ভূমিকা দেখা গেছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক এলাকায় আমরা জেনেছি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হচ্ছে। আসলে সেসব এলাকায় বিরোধী দলীয় প্রার্থী নেই বা কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে বলে এমনটি হচ্ছে। এসব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সেখানে অগণতান্ত্রিক চর্চা।’

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন ইসির জন্য বড় পরীক্ষা। নির্বাচন কমিশন কেমন ভূমিকা পালন করে, তা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যেভাবে সহিংসতা বাড়ছে, তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না। কেন না আগের নির্বাচনের যা কিছু হয়েছে, তার কারণেই এবারের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগজনক পরিবেশ বিরাজ করছে।’

গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ অগণতান্ত্রিক
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পৌর নির্বাচনে সাংবাদিকদের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কড়াকড়ি আরোপ অগণতান্ত্রিক।

এ সময় সুজন নেতৃবৃন্দ ভোটের আগেই এ ধরনের বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক হস্তেক্ষেপ তুলে নেয়ার দাবি জানান।


শেয়ার করুন