আসাম থেকে ৭০ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে পুশইন করা হবে?

sarbananda-sonowal-647_081015023126-550x343সিটিএন ডেস্ক:
প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্য আসাম থেকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে রাজ্যটিতে প্রথমবার ক্ষমতায় আসা বিজেপি জোট সরকার। গত মঙ্গলবার বিজেপি জোট সরকারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে সর্বানন্দ সোনোয়াল তার পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী কথিত বাংলাদেশি বিতাড়নের কাজ শুরু করেছেন বলে আসামের নিউজ চ্যানেল প্রতিদিন টাইমের এক খবরে বলা হয়েছে।
নির্বাচনে জেতার পরই সনোয়াল ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার সরকারের প্রথম কাজই হবে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের ২৬৩ কিলোমিটার সীমান্ত সিল করে দেওয়া। এর মধ্যে ৪০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই, আসাম সরকার মনে করেÑ অনুপ্রবেশকারীরা এই পথ দিয়ে আসামে অনুপ্রবেশ করছে। গত ৩০ বছরে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরা হয়। অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত আছে। এখন এই অনুপ্রবেশকারী ‘বাংলাদেশি’দের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৭০ লাখ কথিত বাংলাদেশিদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে তিন লাখ হিন্দু বাঙালিও আসাম থেকে বহিষ্কারের মুখে রয়েছেন। কয়েক দশক ধরে ভারতে বসবাস করে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার তালিকায় নাম উঠানো ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৯ জনের নাগরিকত্ব নিয়ে এরইমধ্যে তোলা হয়েছে প্রশ্ন। বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসায় হিন্দু বাঙালিদের মধ্যেও বহিষ্কারের শঙ্কা বিরাজ করছে।
আসামজুড়ে ৩৬টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে চলছে এদের বিচার কার্যক্রম। এসব ট্রাইব্যুনালে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৭টি মামলা অন্তর্ভুক্ত হয়। যদিও এদের সবাইকে এখনও আটক করা হয়নি। তবে মামলা শেষে পরোয়ানা জারি করা হবে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভাষায়, এসব ভারতীয় ‘ডি ভোটার’। ভোটার তালিকায় তাদের নামের পাশে দীর্ঘদিন যাবত ইংরেজি ‘ডি’ (সন্দেহজনক) শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসামজুড়ে ‘বিদেশি খেদাও’ কর্মসূচির অধীনে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে এসব মানুষকে নাগরিকহীন করে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ দেওয়ার পক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়ে পড়েছে।
আসামে বাংলাভাষীদের এভাবে দেশটি থেকে বহিষ্কার ঠেকাতে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘সিটিজেন রাইটস প্রটেকশন কমিটি’ (সিআরপিসি)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ আমাদের অর্থনীতিকে এসব তথ্য জানান।
কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে স্পর্শকাতর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে যাতে দুটি প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, তার জন্য ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পৃথক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিও জানিয়েছে অহমীয়রা।
নতুন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ১৯৮৫ সালে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত ‘আসাম চুক্তি’ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ এটাই ছিল রাজ্য বিজেপির প্রধান নির্বাচনি ইস্যু। তিনি বলেছেন, দুবছরের মধ্যে তা শেষ করবেন। চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর যেসব বিদেশি অবৈধভাবে আসামে অভিবাসী হিসেবে ঢুকেছে, তাদের শনাক্ত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের ৩০ বছর পরও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় অহমীয়াদের মধ্যে জমছিল ক্ষোভ ও হতাশা। এ কারণে কট্টর অহমীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল অসম গণপরিষদ এবং বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জেতার পর বিজেপি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারছে না।
গত ১৫ বছর আসামের ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ছিল নাÑ এমন ধারণাই বদ্ধমূল ছিল আসামের ভূমিপুত্রদের মনে। তবে মুখ্যমন্ত্রী সোনোয়াল এটাও বলেছেন, এক্ষেত্রে হিন্দু বা মুসলিমের কোনো প্রশ্ন নেই। ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব থাকতে হবে। বিষয়টি রাজ্যস্তরীয় নয়, এটা জাতীয় ইস্যু। শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি)। এরপর অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম


শেয়ার করুন