আলোচনায় কেন খাইরুল চৌধুরী?

khairu-300x270শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
রত্মাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী খাইরুল চৌধুরী নিয়ে উখিয়ার রাজনীতিতে হঠাৎ আলোচনা চলছে। তাঁেক নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী; দু’ঘরানায় আলোচনা এখন তুঙ্গে। রাজনীতির মাঠের ‘রহস্য পুরুষ’ খ্যাত এই খাইরুল চৌধুরীও রহস্যে কম যান না। বিএনপির জেলার পর্যায়ের নেতা হয়েও বিএনপির প্রার্থী হতে তাঁর অনীহা কেন? তা-ই রহস্যের জালে নতুন নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে। বর্তমানেও রহস্যের জল প্রতিনিয়ত ঘোলা হচ্ছে। বিএনপি পক্ষ থেকে প্রার্থী হতে অনীহার দাবি করা হলেও রাজনীতির মাঠে ‘ধুরন্ধ’র খাইরুল চৌধুরী বলছেন উল্টো কথা। তিনি বলছেন, বিএনপি তাঁকে মূল্যায়ন করতে পারেনি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার আলোচিত একটি ইউনিয়ন রত্মাপালং। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়ছেন জেলা বিএনপি সদস্য শিল্পপতি খাইরুল চৌধুরী। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতা হয়েও তিনি কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন; তা নিয়ে উয়িখার বিএনপি অঙ্গনে শোরগোল চলছে। কেননা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার চলমান ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সঙ্কট চলছে। দলের এই ‘ক্রান্তিকালে’ কেন শক্তিমান নেতা হয়েও খাইরুল চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন না? তাঁর দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে দল ও তাঁর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। খাইরুল চৌধুরী বলছেন, বিএনপি তাঁকে প্রার্থী করেনি। অথচ বিএনপি বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা। বিএনপির নেতারা বলছেন, খাইরুল মনোনয়ন নেয়নি।
এ ব্যাপারে খাইরুল চৌধুরী বলেছেন, ১৯৮৬সাল থেকে অদ্যবধি তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কোন সময় তিনি দলের সাথে বেঈমানী করেনি।
তিনি বলেন, ‘দল আমার সাথেই বেঈমানী করেছে। বিএনপি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে ওয়ার্ড সদস্যও নয় এমন এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বিএনপি থেকে আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমার কোন দুঃখ নেই। তবে একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে বিএনপি আমাকে মূল্যায়ন করতে পারতো।’
খাইরুল চৌধুরীর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, দু’বছর আগে থেকে রত্মাপালং ইউনিয়নের বিএনপি টিকেট খাইরুল চৌধুরীর জন্য বরাদ্দ রেখেছি। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে স্বতন্ত্র দাবি করে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন।’
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউপি নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আসলেও উখিয়ার রাজনীতিতে বহু সময়ের আলোচিত মানুষ খাইরুল চৌধুরী। রত্মাপালংয়ের বাসিন্দা এই খাইরু চৌধুরী উখিয়ার বিএনপি ও আওয়ামী ঘরানায় একজন ‘ফ্যাক্টর’ ব্যক্তি। জেলা বিএনপির প্রভাবশালী সদস্য এই খাইরুল চৌধুরী জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর ‘সৃষ্টি’। শাহজাহান চৌধুরীর পরিবারের সাথেও ‘অন্তরাত্মার’ সম্পর্ক খাইরুলের। এমনকি তাঁর হু-হু করে উত্থানের পেছনেও রয়েছে শাহজাহান চৌধুরী হাত। তবে দীর্ঘকাল শাহজাহান চৌধুরীর ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে থাকলেও সময়ে আবর্তে পাল্টে যান তিনি। দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে জনমানুষের রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে উঠেন, এমন দাবি খাইরুল চৌধুরীর। এই কারণে তিনি দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সাথেও গড়ে তুলেন ‘শক্ত’ সম্পর্ক। উখিয়া জুড়ে তাঁকে বদির ‘কাছের মানুষ’ হিসাবে জানে। এমনকি ক্ষমতাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উঠ-বস বেশি খাইরুল চৌধুরীর। বর্তমানেও এমন অবস্থায় চলছে।
বিএনপির অভিযোগ, খাইরুল চৌধুরী ‘দু’মুখো’ মানুষ। তিনি নিজেকে জেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত রাখলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিজেকে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে গড়ে নিয়েছেন। আর তার এই কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দিকেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
সূত্র মতে, খাইরুল চৌধুরী এরশাদ সরকারের সময় ছিলেন জাতীয় পার্টি নেতা। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি হয়ে যান বিএনপি নেতা। আবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন নিজেকে পরিচয় করান আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট হিসেবেই। একই ভাবে তিনি বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠেন। এমনকি বদির ব্যবসায়িক পার্টনার বলে গুজব রয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, বিএনপির প্রার্থী না হওয়া তাঁর কৌশল। কেননা বিএনপির প্রার্থী হলে চেয়ারম্যান হতে তাঁর বাধা আসতে পারে। কেননা বিএনপির প্রার্থীর প্রতি ‘চাপ’ আর বদির আস্থার মূল্য দিতে গিয়েই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। তবে আরেকটি সূত্র মতে, তৃণমূলে খাইরুল চৌধুরীর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হলে ভোটের রাজনীতিতে এই জনপ্রিয়তা ভেস্তে যেতে পারে। তাই ভোটের দৌড়ে উতরে যেতে কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে খাইরুল চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি আমার দল। আমি বিএনপির মানুষ। তবে আমি কখনো দল ব্যবহার করে কিছু করিনি। দল আমাকে প্রয়োজন মত ব্যবহার করেছে। আমার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি শুধু দলকে দিয়েছি, দল আমাকে কিছুই দেয়নি।’
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দলের নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদ হিসাবে বিএনপির মনোনয়ন খাইরুল চৌধুরীর জন্য বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু তিনি নেননি।’
দলের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘এটা এখনো বলতে পারছি না। পরবর্তীতে দলের সিদ্ধান্ত মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


শেয়ার করুন