আলেপ্পোয় কাঁদছে মানবতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

আলেপ্পো: সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পোতে রাশিয়া সমর্থিত সরকারি বাহিনীর হামলায় মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সেখানে কাঁদছে মানবতা। সরকারি বাহিনীর হামলায় আলেপ্পোবাসীর কান্না ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এরপও কোনো প্রতিকার নেই। বিশ্ববাসী নীরব।

গত তিনদিনে আবাসিক ভবনে সরকারি বাহিনীর ‘ব্যারেল-বোমা’ হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত এবং আরো ৩০জন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশুসহ একই পরিবারের ১৫জন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বাহিনীর এ ধরণের হামলায় ৬২জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরো বহুসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরার

সিরিয়ায় কর্মরত সিভিল ডিফেন্সের সাদা হ্যালমেটধারী একদল স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী আলজাজিরাকে জানায়, শনিবার একদল মানুষ বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর ব্যারেল বোমা হামলায় নিহত ১৫জনের দাফন কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আলেপ্পোর আল-মাদির পাশে একত্রিত হয়েছিল। এসময় রাশিয়া সমর্থিত সরকারি বাহিনী সেখানে ব্যারেল বোমা হামলা চালায়।

ওই সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া পরিচালক ইব্রাহীম আল হাজ্জ বলেন, এমন সময় সরকারি বাহিনী ব্যারেল বোমাটি ফেলে যখন ১৫ নারী-শিশুর মরদেহের দাফন কাজ চলছিল।

তখন বেঁচে যাওয়া লোকজন নিকটবর্তী সেল্টার হোমে আশ্রয় নেওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল। তারা আশ্রয় হোমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় উপর থেকে দ্বিতীয়দফা ব্যারেল বোমা ফেলা হয়। এতে ভবনটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

সরকারি বাহিনীর এ ধরনের হামলায় সাম্প্রতিক সময়ে ৬২ জনের মতো নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

একটি সিভিল ডিফেন্স অফিসের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, এর আগে বৃহস্পতিবার সিরীয় সরকারি বাহিনী আলেপ্পোর বাব আল-নাইরারের নিকটবর্তী একটি আবাসিক ভবনে যুদ্ধবিমান থেকে ব্যারেল বোমা ফেলে, এতে সদ্য জন্ম নেওয়া এক বেবি ও আরো ১০ শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নারী-শিশু নিহত হন। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এমন সময় ব্যারেল বোমাটি ফেলা হয় যখন ওই পরিবারের সবাই এক সঙ্গে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলেন।

আল হাজ্জ বলেন, নিহতদের মধ্যে ১১জন শিশু এবং ৪জন মহিলা ছিলেন। এছাড়া এধরনের হামলায় শুক্রবার পর্যন্ত ২৩জন নিহতের রেকর্ড করে একটি মনিটরিং গ্রুপ।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশ মূলত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর অর্ধেক অংশ অর্থাৎ পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহীরা, অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারি বাহিনী।

সরকারি বাহিনী ২০১৬ সালের জুলাই থেকে আলেপ্পোর বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত অংশ দখলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে তারা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মাসব্যাপী অবরোধের ফলে সেখানে বিদ্রোহীদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সরকারি বাহিনী যুদ্ধবিমান থেকে বারবার বেসামরিক এলাকায় ব্যারেল বোমা ফেলছে।

সর্বশেষ বিবিসির খবরে বলা হয়, শনিবার আলেপ্পোর আবাসিক এলাকায় সিরীয় বাহিনীর একই ধরনের হামলায় আরো ১৫জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তারা আগের হামলার নিহতদের স্মরণে ওখানে শোক প্রকাশ এবং দাফনের কাজ করছিলেন।

খবরে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পোর যুদ্ধ কবলিত এলাকায় আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, বাজার ও সিভিল ডিফেন্স এলাকায় সিরীয় ও রাশিয়ার যৌথবাহিনী যুদ্ধবিমান থেকে ব্যারেল বোমা হামলা চালাচ্ছে। এতে বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছেন।

এইতো গেল এপ্রিল মাসে সিরীয় বাহিনীর বিমান হামলায় একটি হাসপাতালের তিন চিকিৎসক, ১৪ জন রোগীসহ কমপক্ষে ২০ জন নিহত হন।

উল্লেখ্য, সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের দেওয়া তথ্য মতে, দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে ৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি লোক ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে এবং ১০ লাখেরও বেশি লোক গৃহহীন হয়েছে।


শেয়ার করুন