আমার বাবা এটিএম বুথ নয়!

education-400x273আমাদের সময়.কম:

প্রতিটি মা-বাবা চায় তাদের সন্তানটি শিক্ষিত হয়ে মানুষের মত মানুষ হোক। সন্তান যেন আদর্শ মানুষ হয় এবং ভবিষ্যতে ভাল কিছু করে এজন্য তারা চেষ্টা করেন তাদের সন্তানকে ভাল ভার্সিটিতে পড়াতে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপ করায় অনেক অভিভাবকদের মধ্যেই এখন হতাশা। যেখানে প্রতিদিন কাজ করে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে কীভাবে এই ভ্যাট দিয়ে সন্তানদের মুখ উজ্জ্বল করবে এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। জমি বিক্রি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসা ছেলে বা মেয়েটির ওপর পরোক্ষভাবে কর ধরিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সবাই যে স্বচ্ছল পরিবার থেকে নিতান্ত বিলাসিতা করার জন্য পড়তে এসেছেন তা নয়। বরং বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে আসেন যাদের বেশিরভাগের জন্য শিক্ষাই জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন। কৃষি জমি বিক্রয় করে, বন্ধক দিয়ে কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পড়াশোনা করছেন এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। প্রকৃতপক্ষে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন মধ্যবিত্তের স্বচ্ছল জীবনের পথে বিনিয়োগের অন্যতম ভরসা। উচ্চবিত্তের গন্তব্য তো এখন বহুদূর, বিলেত পেরিয়ে উত্তর আমেরিকায়।
একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশে সরকারের উদ্যমী ভূমিকা কখনোই তেমন ছিল না। বাংলাদেশের গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, মজুর, অভিবাসী শ্রমিক, মধ্যবিত্তের হাল ছেড়ে না দেওয়া সংগ্রামের পথে রাষ্ট্র এখানে উৎসাহ-উদ্দীপনার বদলে বরং বারবার ব্যক্তির অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সুশাসন ছাড়াই এই উন্নয়ন অর্জনকে অর্থনীতিবিদগণ বলেন ‘উন্নয়ন ধাঁধা’। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের মতে, মধ্য আয়ের প্রেক্ষাপটে এই ধাঁধা কাজ করবে না। রাষ্ট্রকে তার কার্যকরী ভূমিকা পালন করতেই হবে। আর মধ্য আয়ের দিকে উত্তরণে সার্বজনীন শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা একটি কার্যকর মই যেটি এখন বেসরকারি খাত সক্রিয়ভাবে সরকারি খাতের পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ৩৪ টি যাদের মোট আসন সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৮০ টি। মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা আছে উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে। অন্যদিকে বর্তমানে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আছে ৮৩ টি যেখানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে চার লাখেরও বেশি। তাছাড়া আছে ৬৬ টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ যেখানে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অধ্যয়ন করছেন প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় বলা যায় এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই প্রধান।
বলা হয়, বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান অযৌক্তিক হারে ছাত্র-বেতনসহ অন্যান্য ফি নিচ্ছে। অভিযোগ অনেকাংশে সত্য হতে পারে। আর তা ঠেকানোর জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকার রয়েছে। তা না করে এ ধরনের করারোপ তো ছাত্রছাত্রীদের বোঝা আরও বাড়াল। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুটি কয়েক উঁচু মানসম্পন্ন। তবে বেশিরভাগই নয়। আর সেসব প্রতিষ্ঠানে কিন্তু খ-কালীন শিক্ষকতা করছেন অনেক ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাই। আর মানের এই দুর্বলতা দূর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো ভূমিকাই তো লক্ষ্যণীয় হয় না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনও করছেন শিক্ষার্থীরা। বাজেটে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পর; পরে ‍আবার তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।


শেয়ার করুন