আমলা ও চুক্তিনির্ভর বিটিভি চলছে খুঁড়িয়ে

tttttসিটিএন ডেস্ক:

বিটিভি ‘আমলা’ ও ‘চুক্তিভিত্তিক’নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভালমন্দ দেখভাল করছেন তারাই। তাদের দাপটের কাছে বিটিভির নিজস্ব কর্মকর্তারা অনেকটা অসহায়। নীতিনির্ধারণী কোন ক্ষমতা নেই বিটিভির নিজস্ব কর্মকর্তাদের। এ বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিটিভির বার্তা, প্রশাসন ও অর্থবিষয়ক কর্মকা- মূলত আমলারাই দেখভাল করছেন। সরকারের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নানকে বিটিভির মতো কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের ৮৪ ব্যাচের এ কর্মকর্তা কবি হিসেবে পরিচিত হলেও সংবাদমাধ্যম পরিচালনার ক্ষেত্রে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় বিটিভি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের অধিকাংশ অনুষ্ঠানই এখন দেখার উপযোগী থাকছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের শীর্ষ পদ উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান)। এ পদে সমপ্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব সুরথ কুমারকে নিয়োগ দিয়েছে। সহসাই এ পদে যোগদানের কথা রয়েছে তার। অন্যদিকে বিটিভির বার্তা বিভাগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিভাগের দুই শীর্ষ পদে রয়েছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিতরা। এর মধ্যে উপ- মহাপরিচালক (বার্তা) পদে শাহিদা আলম ও পরিচালক (বার্তা) পদে নাসির আহমেদ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে কর্মরত আছেন। নাসির আহমেদের টিভি সাংবাদিকতায় ন্যূনতম অভিজ্ঞতাও নেই। অন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিচালক (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব পালনকারী যুগ্ম সচিব মো. নূরুজ্জামান প্রশাসন ক্যাডারের ৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। এ ছাড়া পরিচালক (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) গোলাম শফিউদ্দিন একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। পরিচালক (অর্থ) ড. পীয়ার মোহাম্মদ প্রশাসন ক্যাডারের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। নবম এ কর্মকর্তার গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিচালক পদে আরও কয়েকজন উপসচিবকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরিচালক (সেলস) মুজাফফর উদ্দিন আহমদ নতুন করে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। পরিচালক লায়লা আরজুমান্দ বানু এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে পরিকল্পনা ও অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া পরিচালক (ফিল্ম ইউনিট) জে নেসার ওসমানও চুক্তিতে বিটিভিতে কর্মরত আছেন। অনুষ্ঠান নির্বাহী সৈয়দ জামানও কাজ করছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে। এভাবে গণহারে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগের কারণে তাদের চাপে বিটিভি অনেকটা নুয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিটিভি সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিটিভিতে দায়িত্ব পালন করেছেন ৩৫ জন মহাপরিচালক। এদের মধ্যে বিটিভির নিজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র পাঁচজন। তথ্য ক্যাডার থেকে তিনজন এবং চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের চারজন এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি সবাই ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এদের মধ্যে এম এ সাঈদসহ দু- তিনজন মহাপরিচালক এই রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের জন্য অবদান রাখতে পারলেও অন্যরা শুধুই চাকরি করেছেন। এখানে বেশির ভাগ মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন এক থেকে দুই বছর। সংকটকবলিত এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় সবাই গা বাঁচিয়ে মেয়াদ পার করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে মহাপরিচালক থেকে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত তিন ডজন পদে নিজস্ব কর্মকর্তা আছেন পাঁচ-ছয়জন। বাকিরা অতিরিক্ত দায়িত্বে, প্রেষণে বা পদোন্নতি পেয়ে এসেছেন। যোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষ জনবলের সংকট এবং অপ্রয়োজনীয় ও অস্থায়ী কর্মচারীর আধিক্যে বিটিভির অনুষ্ঠানের মান ও ব্যবস্থাপনা এখন তলানিতে। এসব বিষয়ে বিটিভির সাবেক এক মহাপরিচালক মানবজমিনকে জানান, বিটিভির মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে চাইলে সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য নিয়োগবিধি ও পদ কাঠামো সবার আগে ঠিক করতে হবে। এদিকে সম্প্রতি বিটিভিতে রিপোর্টার নিয়োগ নিয়ে নানা কথা উঠেছে। মহাপরিচালকের ইচ্ছায় গণহারে রিপোর্টার নিয়োগের অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এসব নিয়োগ হয়েছে বলে মনে করেন তারা। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিভি’র মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, বিটিভি চলে নিয়োগ-বিধি ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন ফলো করে। ওই অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক ও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়োগ পাচ্ছেন। এর ব্যতয় হচ্ছে না।


শেয়ার করুন