’আব্বু আমাকে বাঁচাও আমি অনেক কষ্টে আছি’

86691_x3সিটিএন ডেস্ক:

‘আব্বু আমাকে বাঁচাও, আমি অনেক কষ্টে আছি, ওরা আমাকে চাকরি না দিয়ে মারধর করে আটকে রেখেছে।’ ওমান থেকে এভাবেই মোবাইলে পিতার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামের যুবক আশরাফুল হক আশিষের। গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আশিষের পিতা এসএম সোহেল এভাবেই ছেলের কথা বর্ণনা করেন। এর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, ঘিওর উপজেলার মো. হাসান মিয়ার স্ত্রী ছালমা আক্তার ওরফে ছালী দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচার করে আসেছে।

বিদেশে ভাল চাকরি, মোটা অংকের বেতনসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষজনকে নিঃস্ব করে চলেছে। তার ফাঁদে পা দিয়ে গত বছরের ৫ই সেপ্টেম্বর বরঙ্গাখোলা গ্রামের এসএম সোহেলের পুত্র আশরাফুল হক আশিষ ৪ লাখ টাকা খরচ করে ওমানে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আশিষের কোন খোঁজ পায়নি তার পরিবার। সর্বশেষ ৬ মাস আগে আশিষ কৌশলে বাবার কাছে ফোন দিয়ে ওই কথাগুলো জানান। এরপর আর কোন ফোন বিদেশ থেকে আসেনি। ছেলে বেঁচে আছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এ চিন্তায় পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়েছে। আশিষের পিতা এসএম সোহেল জানান, দুই ছেলের মধ্যে আশিষ বড়। লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় ছালমার মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা খরচ করে ওমানে পাঠাই।

কিন্তু এক বছর হতে চললো আমার ছেলের কোন খবর পাচ্ছি না। ৬ মাস আগে হঠাৎ ছেলের ফোন পেয়ে খুশি হই। কিন্তু ছেলে আমাকে ফোনে বলে, ‘আব্বু আমাকে বাঁচাও, আমি অনেক কষ্টে আছি, ওরা আমাকে চাকরি না দিয়ে মারধর করে আটকে রেখেছে।’ এরপর সেই যে ফোনটি কেটে গেল আজও ওর ফোন পাচ্ছি না। জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। এ কথাগুলো বলতেই কেঁদে ওঠেন হতভাগা পিতা। শুধু আশিষই নয়, তারমতো ছালমা আক্তারের ফাঁদে পড়ে ওমানে নিখোঁজ রয়েছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার রৌহদাহ গ্রামের জাকির হোসেন। গতকাল জাকির হোসেনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ৫ মাস ধরে আমার স্বামীর কোন খোঁজ নেই। ছালমার মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ওমান পাঠাই। সেখানে যাওয়ার কয়েক দিন পর মোবাইলে শেষ কথা হয় তার সঙ্গে। শুধু বলেছেন আমাকে ওরা নির্যাতন করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।

এরপর ফোনটি কেটে যায়। এরপর আর কোন ফোন আসেনি। জানি না আমার স্বামী বেঁচে আছেন কিনা। দুই শিশু সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বলেই দুই চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে মুক্তা আক্তারের। এছাড়া হরিরামপুর উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামের মঈনুল মিয়া ও ঘিওর উপজেলার করচা বাধা গ্রামের রুসয়া বেগম ওমান থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তারাও গতকাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে দুর্বিষহ কষ্টের কথা বর্ণনা করেন। এদের মতো আরও অনেক লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে এবং বিদেশে পাঠিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করে সর্বস্বান্ত করেছে মানব পাচারকারী ছালমা বেগম। এদিকে ছালমা বেগম মানুষজনের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এলাকাছাড়া হয়েছে। ছালমা বেগমের গ্রামের বাড়ি ঘিওর উপজেলার রামদিয়া নালী এলাকায়। খোঁজ নিতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িঘরে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি


শেয়ার করুন