আপিলেও মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল

mir_kashem-jugantor_62171-400x225সিটিএন ডেস্ক:
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়েও ফাঁসির দ-াদেশ বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হচ্ছেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমান।
এর আগে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্তব্য করায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিল মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে সাত কার্যদিবসে এ মামলার শুনানি ২৪ ফেব্্রুয়ারি শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মামলায় ২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছিলো। এরপর আপিল আবেদন করেন মীর কাশেম আলী।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষ উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে আপিল রায় ঘোষণার তারিখ প্রথমে ২রা মার্চ নির্ধারণ করেন আদালত। পরে তা ৮ই মার্চ পুন:নির্ধারণ করা হয়।
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে অপহরণ করে হত্যার দু’টি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তাকে এই মৃত্যুদ- দেয়।
তাঁর বিরুদ্ধে আনা ১৪টি অভিযোগের ১০টি প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনা ১৪টি অভিযোগই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নির্যাতন কেন্দ্রকে ঘিরে। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে অপহরণের পর নির্যাতন কেন্দ্রে আটকিয়ে রেখে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগে তিন জন বিচারকের সমন্বয়ে আদালত সর্বসম্মতিক্রমে মৃত্যুদ- দেয়।
এই মৃত্যুদ-ের আদেশ বহাল রেখেছেন আদালত। মীর কাশেম আলীর আপিল রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ঘিরে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মামলার সারসংক্ষেপ
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা মোট ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। এগুলো হলো ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়া বাকি ১২টিই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়। ৩, ৪, ৬,৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে আপিল করেন জয়নুল আবেদীন তুহিন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। এ মামলা এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি আপিলের ষষ্ঠ রায়।
এ ছাড়া আপিলে চূড়ান্ত পাঁচটি রায়ের পর চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
আপিলের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। রায় রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ এরই মধ্যে আবেদন দাখিল করেছে।


শেয়ার করুন