আজ পবিত্র হজ: লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত

সিটিএন ডেস্ক :

আজ ৯ জিলহজ বুধবার, পবিত্র হজ। হাজিদের আরাফাত ময়দানে অবস্থানের দিন।

সেখানে লাখ লাখ হাজি ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ—‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করবেন আকাশ-বাতাস।

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, রহমত প্রাপ্তি ও স্বীয় গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানাবেন সমবেতরা। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যেরও অবতারণা হবে আরাফাতের ময়দানে।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে থাকবেন হাজিরা। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন। আরাফাতের মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ।

হজ পালন করতে এসে যারা অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হবে। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ।

পবিত্র হজ পালন করতে গত সোমবার লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান মিনায় পৌঁছান। গতকাল মঙ্গলবার তারা মিনায় অবস্থান করেন। তারা নিজ নিজ তাবুতেই নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেন।

মিনা থেকে আজ তারা যাবেন আরাফাতে। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। আমির-ফকির, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর ভেদাভেদ থাকবে না সেখানে।

সবার পরনে একই ধরনের সেলাইবিহীন কাপড়, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং তারই কাছে গুনাহ মাফ ও রহমতপ্রাপ্তির আকুতি জানাবেন।

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই আবার মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা এলাকায় অবস্থান নেবেন হাজিরা। ওই স্থানে রাতে অবস্থান করবেন খোলা আকাশের নিচে। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ এক সঙ্গে আদায় করবেন।

মিনায় জামারাতে শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই কঙ্কর সংগ্রহ করবেন। রাতে সেখানে অবস্থানের পর কাল (বৃহস্পতিবার) ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ শেষে মিনার দিকে রওনা হবেন। কাল সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

মিনায় গিয়ে জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে এসেই কোরবানি করবেন হাজিরা। এরপর আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন হাজিরা।

‘হজ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ। বাংলাদেশসহ ১৫০টির বেশি দেশ থেকে এবার প্রায় ২০ লাখ মানুষ হজ পালন করছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ১ লাখ ৬০০০’র বেশি।

সৌদি পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোলায়মান বিন আবদুল আজিজ ইয়াহা বলেছেন, সোমবার পর্যন্ত ১৩ লাখ ৭৪,২০৬ জন হজযাত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। সৌদি আরব ও এর আশপাশের স্থানীয় হজযাত্রীদের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী হাজিদের নিজ নিজ ফ্লাইটের ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা আগে জেদ্দা হজ টার্মিনালে মোয়াল্লেম পৌঁছে দেন। যারা হজের আগে মদিনায় যাননি, তারা মদিনায় যাবেন।

হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ পুলিশ, আধা সামরিক ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। হাজিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনায় কিছুদূর পর পর রয়েছে হাসপাতাল। রয়েছে মোয়াচ্ছাসা, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সদস্য।

হাজিরা পথ হারিয়ে ফেললে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও কর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট (তাঁবু) গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয় সূত্র বলেছে, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।

এবার পবিত্র হজ পালন করতে এসে এ পর্যন্ত স্বাভাবিক কারণে ৪২ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।

আজ কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে

পবিত্র কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে আরবরা বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতিবছর ৯ জিলহজ অর্থাৎ হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন।

হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়।

কাবা শরিফের দরজার ও বাইরের গিলাফ দুটিই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরা বানানো হয়। চারটি টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত।

গিলাফ কারখানার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বলেন, নতুন গিলাফটি তৈরি করতে ১২০ কেজি স্বর্ণ, ৭০০ কেজি রেশম সুতা ও ২৫ কেজি রুপা লেগেছে। নতুন গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।


শেয়ার করুন