আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

আজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ সম্পন্ন হয়েছে। আজ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি দেবেন।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হন। কিন্তু আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানিতে ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানির কারণে এই ঈদ সাধারণ মানুষের কাছে কোরবানির ঈদ বলেই পরিচিত।

ইতিমধ্যে কোরবানির পশু কেনা সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্য এলাকায় যাঁরা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে থাকেন, তাঁরা অনেকেই বরাবরের মতো গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে স্বজনদের কাছে ছুটে গেছেন তাঁরা।

ঈদুল আজহায় মুসল্লিদের প্রধান কর্তব্য দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ জামাতে আদায় করে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। ঈদের জামাতের খুতবায় খতিব ঈদের তাৎপর্য তুলে ধরবেন। নামাজ আদায়ের পর শুরু হবে কোরবানি। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা হলেও, ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে।

রাজধানী থেকে দেশের প্রান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিকাংশ সড়কই এবার ছিল ভাঙাচোরা। এ সড়ক ধরেই কষ্ট ভোগ করে লাখো মানুষ গেছেন স্বজনদের কাছে। ট্রেন-লঞ্চেও প্রচুর ভিড় ছিল। তা সত্ত্বেও ঈদের আগের সেই চিরচেনা দৃশ্য এবার দেখা গেছে—বাক্সপেটরা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ সপরিবার গ্রামে যাচ্ছেন। সড়কপথের যাত্রীদেরই দুর্ভোগ বেশি হয়েছে। দূরপাল্লার গাড়ির সময়সূচি ঠিক ছিল না অনেক সড়কপথে। যানজটে পথেই আটকে থাকতে হয়েছে লম্বা সময়। গতকাল শুক্রবার অপেক্ষাকৃত বেশি যানজট ছিল। তবে গতকাল বিকেলের পর অনেক জায়গায় জট কমতে শুরু করে।

দেশে এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতিতে ঈদ উদ্‌যাপিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে প্রবল বন্যা হয়েছে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসলহানি হয়েছে।

অনেক এলাকার ঈদগাহও ডুবে গেছে। পানি নামতে শুরু করলেও অনেক ঈদগাহে এখনো ঈদের জামাত আদায় করার মতো পরিবেশ নেই। সেই সব জায়গায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহার জামাত।

বন্যাকবলিত শস্যসম্পদ হারানো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধ, সড়ক বা উঁচু স্থানে অস্থায়ী ঝুপড়িঘর করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পরিস্থিতির বাস্তবতায় এসব দুর্গত মানুষের পক্ষে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে সমাজের বিত্তবান, সামর্থ্যবান, যাঁরা কোরবানি করবেন তাঁদের কোরবানিতে হক রয়েছে দুস্থ অসহায় মানুষের। এটি ধর্মেরও বিধান। কাজেই আনন্দের দিনে আর্ত-অসহায় মানুষের কথা ভুলে থাকলে চলবে না। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই আনন্দের দিনে ওই অসহায় নিঃস্ব মুখগুলোতে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারলেই সার্থক হবে ঈদের আনন্দ উদ্‌যাপন।

বাণী

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ, জাতিসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন।


শেয়ার করুন