আজ কবি আল মাহমুদ এর ৮৬তম জন্মদিন

ইসলাম মাহমুদঃ
‘আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/ আব্বা বলেন, মন দে/পাঠে আমার মন বসে না/কাঁঠালচাঁপার গন্ধে। …তোমরা যখন শিখছো পড়া/ মানুষ হওয়ার জন্য,/ আমি না হয় পাখিই হবো,/ পাখির মতো বন্য।’ এমন কালজয়ী শিশুতোষ ছড়ায় যিনি পাখির মতো হওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি কবি আল মাহমুদ।

আধুনিক কবিতায় লোকজ উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া কবি আল মাহমুদ পঞ্চাশের দশকের কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষ। তিরিশের আধুনিক কবিরা যখন পাশ্চাত্যের প্রভাবে নাগরিক, নৈর্ব্যক্তিক ও খানিক নিরাশাবাদিতার দ্বারা প্রভাবিত আল মাহমুদ তখন দেশজাত, মানবিকতা, সাম্যবাদ ও এতে লগ্ন থাকার আকুতি জানিয়েছিলেন কবিতায়। বাংলার পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। আজ কবি আল মাহমুদের ৮৬তম জন্মদিন।

কতদূর এগোলো মানুষ! /কিন্তু আমি ঘোরলাগা বর্ষণের মাঝে আজও উবু হয়ে আছি। /ক্ষীরের মতন গাঢ় মাটির নরমে কোমল ধানের চারা রুয়ে দিতে গিয়ে ভাবলাম, এ মৃত্তিকা প্রিয়তমা কিষাণী আমার। (‘প্রকৃতি’, সোনালি কাবিন)

২০১৯ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি নেই কিন্তু বাংলা সাহিত্যে কবি আল মাহমুদের অবস্থান চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে কাব্যে, সাহিত্যে। কবিতায় আল মাহমুদ এমন এক স্বতন্ত্র অবস্থানে নিজেকে তুলে এনেছিলেন যেখানে তিনি নিঃসঙ্গ শেরপার মতোই বিরাজ করছেন। শুধু কবিতা নয়, অনন্য সব গল্প-গদ্যের অসাধারণ রূপকার আল মাহমুদ।

বাংলা কবিতার অনন্য কণ্ঠস্বর কবি আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা মীর আবদুর রব। মা রওশন আরা মীর। স্ত্রী সৈয়দা নাদিরা বেগম। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। কবিতা লিখে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, প্রভূত খ্যাতি ও সম্মাননা।

সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে সাহিত্যানুরাগীদের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন কবি আল মাহমুদ। সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। প্রথমে সাপ্তাহিক কাফেলা, তারপর দৈনিক মিল্লাতে সাংবাদিকতা করেন। ১৯৬৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেছিলেন। সেখানের মফস্বল পাতার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে সরকারবিরোধী একমাত্র পত্রিকা জাসদের মুখপত্র ‘গণকণ্ঠ’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে কারাবরণ করেছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে শিল্পকলা একাডেমির সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, আত্মজীবনীসহ সাহিত্যের সব শাখাতেই তাঁর বিচরণ ছিল। তাঁর লেখনীতে প্রথম দিকে গ্রামের জীবন, বামপন্থী চিন্তাধারা এবং নারী মুখ্য হয়ে উঠলেও পরে ইসলামী ভাবধারাও প্রবল হয়ে ওঠে। তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। কিন্তু ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’ আল মাহমুদকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। তাঁর বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’।


শেয়ার করুন