আজ কক্সবাজার সৈকত মাতাছেন এলআরবি, জেমস ও মিলা

ককসবাজার বীচটাইমস রিপোর্ট ৥

৩১ ডিসেম্বর রাতটি অতিবাহিত হয়েই শীতের হিমবাহ রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শিশির ভেজা বালিয়াড়িতে বছরের শেষ সূর্যাস্তের যবনিকা ঘটার মন্দ্রেক্ষণ ৩১ ডিসেম্বর। এই দিন রাত ১২:০১ মিনিট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৫। নববর্ষকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত পর্যটন নগরী কক্সবাজার। তবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুলের রায়কে কেন্দ্র করে ২ দিনের হরতাল দিয়েছে জামায়াত ইসলাম। এ কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে জেলার বাইরের থেকে অনেক পর্যটক আসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ আজ ও কাল হরতাল দেওয়ার কারণে হোটেল-মোটেলের অনেক রুম ক্যানসেল করে দিয়েছে পর্যটক। এ রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারো ২০১৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারীতে যেভাবে কক্সবাজার পর্যটক আটকা পড়েছিল সেভাবে বিড়ম্বনার আশংকাও রয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ইতিমধ্যে ২০১৪ কে বিদায় ও নতুন বছর ২০১৫ কে বরণ করতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সর্বক্ষেত্রে সাঁজ সাঁজ রব। নতুন করে সাজানো হয়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ পর্যটনমুখী বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
পর্যটকরা অধিকাংশ আবাসিক হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টের পাঁচ কিলোমিটারে চারটি পৃথক কনসার্টসহ বিভিন্ন হোটেল ও ইকো রিসোর্টে চলবে দেশি-বিদেশি তারকা শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পর্যটকের ঢল নামতে চলেছে কক্সবাজারে। তবে বছরের শেষে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় কিছুটা শংকাও থেকে যাচ্ছে।
সুত্রে জানা গেছে, থার্টি ফাষ্ট নাইট উপলক্ষে আগত পর্যটদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের তরফ থেকে চারস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী আগাম তৈরী করে রাখা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের যাতে হয়রানীর স্বীকার না হয় এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারী রয়েছে। এদিকে ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইটে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টায় কনসার্টটি সরাসরি সম্প্রচার করবে এসএ টিভি। সংগীত পরিবেশন করে সৈকত মাতাবেন জেমস ও মিলা।তাছাড়া পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেশ টিভির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে এক মনোজ্ঞ কনসার্ট ‘সৈকতে ঝংকার’।
দেশ টিভি সূত্রে জানা গেছে, কনসার্টে গান পরিবেশন করবে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি, দলছুট ও ফিডব্যাক। আরও গাইবেন শিল্পী হায়দার হোসেন ও শাহনাজ বেলী।
আমব্রিনের উপস্থাপনায় এবং আলমগীর হোসেন ও সুমনা সিদ্দিকীর প্রযোজনায় ৩১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে কনসার্টটি সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশ টিভি।
তাছাড়া সমুদ্র সৈকতের হোটেল-মোটেল জোন, কলাতলী, তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস,সি-গাল,লং-বিচ,সি-প্যালেস,আন্তর্জাতিক চেইন রেস্টুরেন্ট কেএফসিসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থার্টিফার্স্ট নাইটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রংবেরঙের আলোকসজ্জায় হোটেল-মোটেল জোন এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে সবচেয়ে বড় উৎসব বসবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। গত বছর ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে থার্টিফাষ্ট নাইট কেটেছিল একেবারে পর্যটক শূন্য।
পর্যটন ব্যবসায় গত বছর লোকসান গুনলেও ১৪’র শেষ দিকে এসে আশানুরুপ পর্যটকের আগমন কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে হোটেল ব্যবসায়ীদের।এ উপলক্ষ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস বাংলোর সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এসব হোটেলে প্রতিদিন গড়ে ১লক্ষ মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকের এ রকম আগমন অব্যাহত থাকবে।তবে থার্টি ফাস্ট নাইট উদ্যাপনের জন্য সৈকতে সমবেত হবেন প্রায় ৩ লাখ পর্যটক, যা হবে দেশের সর্বোচ্চ লোকসমাগমের থার্টি ফাস্ট
তিনি আরও জানান, গত বছর ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে থার্টিফাষ্ট নাইট কেটেছিল একেবারে পর্যটক শুন্য। পর্যটন ব্যবসায় গত বছর লোকসান গুনলেও ১৪’র শেষ দিকে এসে আশানুরুপ পর্যটকের আগমন কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। এখন পর্যটন মৌসুম শুরুর পর থেকে চলে আসা মন্দাভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁিয়েছে পর্যটন ব্যবসাও।
কিছু পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, বছরের শেষ দিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে লোকজন কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসেন। গত বছর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য এই সৈকতে প্রায় তিন লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। এবারও তাই আশা করছেন হোটেল মালিকরা।
এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন নিয়ে অন্য রকম আয়োজন করেছে কক্সবাজারের স্বনামধন্য তারকা হোটেল সীগাল কর্তৃপক্ষ। তাদের হোটেলের সুইমিংপুলে অনুষ্ঠিত হবে বেসরকারী টেলিভিশন ইটিভি‘র লাইভ প্রোগ্রাম। সেই সাথে আঁিখ আলমগীরের সংগিতানুষ্ঠান, ফ্যাশন শো, ডিজে পার্টিও থাকবে।
এছাড়া নতুন বছরের প্রথম দিন থাকছে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল এলআরবি ও ব্ল্যাক‘র কনসার্ট, ফ্যাশন শো, ডিজে পার্টি সহ নানা বিনোদন মূলক আয়োজন। ফুড টিকেটের মাধ্যমে সকল প্রোগ্রামই রাত ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে।
এছাড়া আরো থাকছে, নিয়ে প্যাঁচার দ্বীপের মারমেইড বিচ রিসোর্টও আয়োজন করছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের জন্য ফ্যাশন শোর পাশাপাশি তারকা শিল্পীদের নিয়ে ডিজে, লাইভ সি ফুড, ফায়ার শো, ফানুস ওড়াানো, ফায়ার ওয়ার্কসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সৈকতের তারকা হোটেল ওশেন প্যারাডাইসে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে হোটেলে ফ্যাশন শো আর নাচ-গানের আয়োজন রয়েছে। টিকিটের বিনিময় এসব অনুষ্ঠান দেখানো হবে হোটেল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানাগেছে।
এ ছাড়া হোটেল সিগাল, লং বিচ, সি প্যালেস, প্রাসাদ প্যারাডাইস, সিলভার সাইনসহ বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে থার্টি ফাস্ট নাইটের বিশেষ আয়োজন রয়েছে। সৈকতে থাকছে বেসরকারি কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের পৃথক একাধিক লাইভ কনসার্ট। দেশের নামীদামি তারকা শিল্পীরা এতে গান পরিবেশন করবেন।
এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কক্সবাজার সৈকতের ট্যুারিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদুল কবীর বলেন পর্যটকদের নিরাপত্তায় সাদা পোষাকেসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে সৈকতের বিস্তৃত এলাকায় ট্যুরিষ্ট পুলিশের ১২৩ সদস্য বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ দবলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনসহ ভ্রমণে আসা পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সৈকতে লাখো মানুষের সমাগম সামাল দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কয়েক দিন আগে থেকে শহরের প্রবেশদ্বার এবং সৈকতে নামার ফটকে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে।


শেয়ার করুন