আজারবাইজানে

বন্দি এক নারী সাংবাদিকের চিঠি

139077_1

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিটিএন :
খাদিজা এসমায়িলোভা আজারবাইজানের একজন খ্যাতিমান নারী সাংবাদিক। তিনি ফ্রি ইউরোপ এবং রেডিও লিবার্টির কন্টিবিউটর ও প্রতিবেদক। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আজারবাইজানের বাকু কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।

বিভিন্ন সময় তিনি আজারবাইজান সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে ক্রিমিনাল মামলায় জড়িয়ে সাত বছর ৬ মাস সাজা দেয়া হয়েছে।

সেই কারা থেকেই খাদিজা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেছেন। সেই চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত হয়েছে।

খাদিজা এসমায়িলোভার সেই চিঠিটি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

আমি খাদিজা এসমায়েলোভা, আজারবাইজানের বাকু কারগার থেকে লিখছি। আমি একটি ক্রিমিনাল মামলায় সাড়ে সাত বছরের কারা ভোগ করছি, যে অপরাধ আমি কখনই করিনি।

আমি একজন সাংবাদিক এবং আমার অপরাধ- আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এবং প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা। আলিয়েভ উত্তরাধিকার সূত্রে ২০০৩ সালে তার বাবার কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছেন। তিনি সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যক্ষেণকারী সংস্থাকে শত্রু হিসিবে চিহ্নিত করেছেন। যেখানে জনগণের মৌলিক বাকস্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে।

আমি যখন চিঠি লিখছি, প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন গেছেন ‘পারমানবিক নিরাপত্তা সম্মেলন’ এ যোগ দিতে, যা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক বন্দীদের ক্ষমা, কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার কথা তুলে ধরেন যদিও একজনকেও তা করা হয়নি এবং ন্যায়বিচার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।

আলিয়েভের জন্য এই আমন্ত্রণটি ছিল খুবই দামী। কেননা, তিনি বরাবরই উল্লেখিত বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা অস্বীকার করে আসছেন।তিনি বরাবরই বলে আসছেন আজারবাইনে কোনো রাজনৈতিক বন্দি নেই। গেল ডিসেম্বরে ক্র্রিস্টোফার এইচ স্মিথ (আরএনজে) আজারবাইজানের গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিকমহলে তুলে ধরেন।

হঠাৎ কয়েকজন কারাবন্দিকে মুক্তি দিলে কী বলা যাবে আজারবাইজানের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে?

এটা সত্য যে, তিনি হঠাৎ এমনটি করেছেন যাতে তাদের মুক্তির বিনিময়ে তিনি ওবামার সঙ্গে করমর্দন বা তার ব্যর্থতা ডেকে মুদ্রা যোগান বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারেন। কেননা, আন্তর্জাতিকবাজারে তেলের দাম হঠাৎ পতনের পরে আজারবাইজানের অর্থনীতি অনেকটাই পঙ্গু।

আলিয়েভ নির্লজ্জভাবে কারবারী চিপ হিসাবে রাজবন্দীদের ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, তার পররাষ্ট্র নীতির বিষয়সূচিতে। আর ওরাও খুশি যে তারা মুক্তি পেয়েছেন।

আমিও খুশি, খুবই খুশি এই জন্য যে, কিছুসংখ্যক হলেও রাজবন্দি মুক্তি লাভ করেছেন। আমি মনে করি তাদের যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি।
আমি তো বাকু-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের খেলনা নই, যা কর্মকর্তারা জাহির করে স্বাভাবিক ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আমরা বর্তমানে এক জিম্মি শাসনকালে রয়েছি, যেখানে আমাদের জেলে ভেতরে কিংবা বাইরে থাকা একই কথা।

বাকস্বাধীনতা আমার সার্বজনীন এবং সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু আলিয়েভ সরকার প্রধান হিসেবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই আমার অপরাধের ক্ষমা সম্পর্কে যা আমি কখনোই করনি। আমি জেলের মধ্যেও নিজেকে মুক্ত মনে করছি। কেননা, আমার বাকস্বাধীনতা ব্যবসার জন্য নয়।

প্রেসিডেন্ট ওবামা, আপনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভকে জিজ্ঞাসা করুন স্বাধীন গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের উপর নিষ্ঠুরতা বিষয়ে, কয়েকজনের সুবিধার জন্য সাদা-হাতি প্রকল্পে পেট্রোডলার বিলিয়ানের বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে, তাকে জিজ্ঞাসা করুন কখন তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিবেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন কখন তিনি সব রাজনৈতিক বন্দিকে ছেড়ে দেবেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন কখন তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিবেন এবং বাস্তবে চর্চা করবেন। এগুলো তার দেয়া কোনো একটি উপহার না যে তিনি তা দিতে বা কেড়ে নিতে পারে। আমি এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাই আমি আজ জেলে ঢুকেছি।

এইগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, তাদের কাছে এগুলোর কোনো উত্তর নেই। আর আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

-খাদিজা এসমায়িলোভা


শেয়ার করুন