আকাশে চেরাপুঞ্জি!

ab24020c-f14a-4689-ab2e-ccc8d6a5967eমুহাম্মদ শামসুল হক শারেক

শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথে মহান আল্লাহর অপরূপ প্রকৃতির মধ্যে আমরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। উচঁ নিচু সবুজ পাহাড় গুলো দেখে সূরা আর রাহমানের আয়াত গুলো আমার বার বার মনে পড়ছিল তখন। মহান আল্লাহ তায়ালা গোটা সৃষ্টিজগত মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। আর তা সাজিয়েছেন অপরূপ সৌন্দর্যে। ‘অতএব তোমার পালন কর্তার ক্ােন ক্ােন অবদানকে অস্বীকার করবে?’ আসলেই প্রকৃতিগতভাবে সুন্দর এগুলো। এখানকার নির্মল প্রকৃতি যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে।
পৃথিবীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে। সত্য কথা হলো ইতিপূর্বে এটি আমারো জানা ছিল না। আবার অনেকেই জানেন না এই চেরাপুঞ্জি বাংলাদেশ থেকে কতদূর। মানচিত্র দেখে হিসাব-নিকাশ করে দেখাযাবে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সোজাসুজি ২০ কিলোমিটারেরও কম। বাড়ির পাশেই বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা! সেখানে আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ ব্যাপার। তাই বৃষ্টির মৌসুমে চেরাপুঞ্জি ভ্রমণে গেলেই বুঝা যাবে কি অবস্থা।
মানচিত্রে চেপুঞ্জির দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের কম হলেও সীমান্তের যেখানে ইমিগ্রেশন অফিস আছে, সেই তামাবিল থেকে চেরাপুঞ্জি যেতে ঘুরতে হয় প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। আর এটুকু পথ পেরুতে সময় লাগে অন্তত দুই ঘণ্টা। শিলংয়ের দূরত্ব এর চেয়ে সামান্য বেশি। মেঘালয়ের রাজধানী ভারতের অন্যতম পর্যটন শহর শিলং বাদ দিয়ে শুধু চেরাপুঞ্জি ভ্রমণ তেমন মজা হয় না। আমরা কিন্তু শিলং থেকেই চেরাপুঞ্জি গিয়েছিলাম।
তবে সীমান্ত পার হয়ে যখন পাহাড় চূড়ার আঁকাবাঁকা পথে আমরা চলছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এই দূরত্ব আরো বেশি হলেই বোধহয় ভালো হত। চলার পথে চারপাশের অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। কখনও আমাদেরকে চারপাশ থেকে ঢেকে দিচ্ছিল সাদা-কালো মেঘ। আসলেই প্রাকৃতিকভাবে এগুলোর সুন্দর বর্ণনা দেয়া কঠিন। এখানে ভারত সরকার পাহাড়ের আকাঁবাঁকা পথে সড়কটাই শুধু করেছে। কখনওবা পাহাড়ের ঢালে সরু রাস্তার আরেক পাশেই দেখা যায় গভীর খাদ। এ যেন ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ দৃশ্য!
যদ্দুর জানতে পেরেছি, চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ৩.৯ থেকে ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের চেরাপুঞ্জি ভ্রমণ ছিল জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে। তখন প্রচন্ড ঠান্ডা। উত্তর পূর্ব ভারতের এই প্রান্তে বৃষ্টিপাতের হার বেশি। বর্ষাকাল ছাড়াও বৃষ্টি হতে পারে যে কোন সময়। এখানে মে থেকে অক্টোবরে নাকি পূর্ণ বৃষ্টির রূপ দেখা যায়। ঠান্ড বেশী হলেও বেড়ানোর ভাল সময় নাকি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। b873ddaa-417b-4c50-b6d3-e58a9324f76c
চেরা পুঞ্জির পথে দেখা গেল অদ্ভুত ব্যাপার। একপাশে সবুজ পাহাড়, আরেক পাশে লাগোয়া নেড়া পাহাড়। সবুজ পাহাড় গুলোতে আছে সুবুজ জঙ্গল আর গাছ গাছালী। পাশেই নেড়া পাহাড়ে গাছ পালা তো দূরের কথা সেখানে কোন সবুজ ঘাসও নেই। খবর নিয়ে জানাগেল সবুজ পাহাড় গুলোতে ৪-৫ ফুট মাটি থাকায় সেখানে গাছ গাছালী জন্মেছে। আর ওগুলোর ভেতরে নানা রকম মূল্যবান পাথরে নাকি ভরপুর। নেড়া পাহাড় গুলো নাকি বিভিন্ন প্রকার খনিজ সম্পদে ভরা। কোন কোন পাহাড়ের উপরের আবরণ সরে গিয়ে বেরিয়ে আসছে কয়লা আর কয়লা। ওসব পাহাড়ে নাকি সম্প্রতি সন্ধান পাওয়াগেছে ইউরেনিয়ামের মত মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ। শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথে তেমন একটা লোকালয় নেই। মাঝে মধ্যে ছোট খাট ঘরবাড়ি দেখা গেলেও ওগুলো তেমন উন্নত নয়। মাঝ পথে কোন কোন স্থানে স্টপেজে ছোট খাট দোকান পাট মেলে। চেরাপুঞ্জি মেঘালয় রাজ্যের একটি ছোট ডিস্ট্রিক্ট হলেও সেখানে থাকা খাওয়ার তেমন একটা অসুবিধা নেই বললেই চলে।
মেঘালয় রাজ্যের যেসব পাহাড় গুলোর গড় উচ্চতা ৫-৬ হাজার ফুট, তার অধিকাংশ চেরাপুঞ্জিতেই অবস্থিত। তাই এখানে ঠান্ডা আর বৃষ্টিপাত বেশী। এরকম একটি সুউচ্চ পাহাড়ে উঠে আমার মনে হয়েছে আকাশেই যেন চেরাপুঞ্জি। স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে সফর সঙ্গী ইলিয়াছসহ অন্যান্যদের আগে আমি ওই পাহাড়ে উঠছিলাম। সাথে পানি না নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়ি। সময় বাচাঁনোর জন্য তাড়া থাকায় আমি একটু দ্রুত উঠতে গিয়ে হাপিঁয়ে উঠি। পাহাড়ের উপরে উঠে আমার শরীরে দেখা দেয় পানি শূন্যতা। মাথা চক্কর দিয়ে উঠে, মূখে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারছিলাম না। ইলিয়াছকে দ্রুত নামার ইশারা করে নেমে যাই পাহাড় থেকে। পাহাড় থেকে নামতে নামতে শরীরে জ¦র অনুভব করি। গাড়িতে এসে পানি পান করে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে সফর সংক্ষিপ্ত করি।
পরের দিন গৌহাটি হয়ে কলকাতা, দিল্লী, আগ্রা ও বোম্বে যাওয়ার ট্রেনের টিকেট কনফার্ম করা ছিল। অগত্যা ঠান্ডাজনিত কারণে দিল্লী আর যাওয়া হলা না। তাই বলতে হয় ‘দিল্লী এখানো অনেক দূর’। প্রকাশ ঃ ১০.০৩.২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ। #

# লেখক ঃ কক্সবাজার ব্যুরো চীফ দৈসিক ইনকিলাব, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দৈনিক হিমছড়ি। মোবাইল ঃ ০১৮১৯-১৭০১৯০। ঊসধরষ : রহয়রষধন.পড়ী@মসধরষ.পড়স


শেয়ার করুন