পরিকল্পনায় আটকে আছে সৌরবিদ্যুৎ

 বাংলামেইল:

সোলার solar01সোলার হোম সিস্টেমে সরকার সাফল্য পেলেও গ্রিডভিত্তিক বড় সৌর পার্ক স্থাপনে কোনো সুখবর নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি সঙ্কট একটা বড় বাধা বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সৌর শক্তির মাধ্যমে ২০১৬ সালের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রও স্থাপন সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্থাপনার জন্য ১৮০ একর জমির প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাসনাইন জানান, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সৌরবিদ্যুতের জন্য ভূমির সংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অধিকাংশ ভূমিতে চাষাবাদ হয়। এছাড়া রয়েছে বসতি ও শিল্প স্থাপনা। তাই চরাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলে পরিত্যক্ত সরকারি জমি খোঁজা হচ্ছে।

তিনি জানান, আগে একবার বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর দুই পাড়ের জমি সোলার পার্কের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাওয়া যায়নি। আবারও আবেদন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ডিও লেটারের মাধ্যমে (আধাসরকারি পত্রে) সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর কাছে এই জমি বরাদ্দ চেয়েছেন।

সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচ শতাংশ (৮০০ মেগাওয়াট) এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ (২০০০ মেগাওয়াট) নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদনের কথা রয়েছে, যার মধ্যে সৌর শক্তিতে উৎপাদনের কথাও বলা হয়েছে। এই হিসেবে ২০১৫ সাল নাগাদ ৮০০ মেগাওয়াট এবং ২০২০ সালের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা।

এর মধ্যে সোলার হোম সিস্টেমে বাংলাদেশ সাফল্য ঈর্ষণীয়। বর্তমানে সারাদেশে ৩৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের গ্রিড বিদ্যুৎবিহীন অঞ্চলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

এদিকে পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় ৬৫০ কিলোওয়াটের একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রটি মিনি গ্রিডে বিদ্যুৎ দেবে। এই কেন্দ্রটিরও ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। এডিবির অর্থায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কাপ্তাইয়ে ৭৫০ কিলোওয়াটের একটি প্যানেল নির্মাণ করছে। সাত সিটি করপোরেশনে রাস্তার বাতির জন্য এক মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১৫ উপজেলায় একটি করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সম্মিলিতভাবে এখান থেকে ৪০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তবে সোলার পার্ক স্থাপনে সরকারি বেসরকারি কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা নেই। ২০১৬ সালের মধ্যে সোলার পার্কের মাধ্যমে ১৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সরকারের বড় পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২০০ একর জমির উপর ৬০ মেগাওয়াট, কুড়িগ্রামে ১১০ একর জমিতে ৩০ মেগাওয়াট, জামালপুরের সরিষাবাড়িতে তিন মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণ, কাপ্তাইয়ে সাড়ে সাত মেগাওয়াট, ঈশ্বরদীতে দুই মেগাওয়াট, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ১৫ মেগাওয়াট, আরিচাঘাট এলাকায় দেড় মেগাওয়াট, সিরাজগঞ্জে ৩ মেগাওয়াট, রংপুরের গঙ্গচড়ায় ৩৫ মেগাওয়াট ও কুয়াকাটায় ২ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প।

এর মধ্যে জামালপুরের প্রকল্পটির জন্য একটি বেসরকারি কনর্সোটিয়ামের সঙ্গে চুক্তি হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। জার্মানির আইএফই (এরিকসেন) এবং বাংলাদেশের কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম (সিপিসি) ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড (জেইএল) যৌথভাবে এ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে। এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। কুড়িগ্রামের প্রকল্পটির ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কাটেনি। আর অন্যান্য প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ এখনও শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল আগে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পরে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া। তাহলে হয়তো এমন সমস্যায় পড়তে হতো না।’


শেয়ার করুন