অ্যামনেস্টি কি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে?

সিটিএন ডেস্ক:

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে বিবৃতি দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নয়ত তা হবে মুক্তিযুদ্ধের অপমান।
গত ২৭শে অক্টোবরে দেয়া সেই কড়া বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও আপিল প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধা ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ করেছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি করে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় স্থগিত করে স্বচ্ছ বিচারের আহ্বানও জানায় তারা।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে পাঠানো প্রতিবাদে বলেছে, ‘বিবৃতির শেষাংশে অ্যামনেস্টি বলেছে যে, ১৯৭১ সনে স্বাধীনতাপন্থি বাহিনীও গুরুতর অপরাধ করেছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কিংবা তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।’ – এই বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। এ জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রতিবাদে আরো বলা হয়, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দেশীয় আদালত হলেও ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অফ সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিআরপি) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম আইনের মান অনুসরণ করে চলেছে।
তাছাড়া বিচারাধীন দু’টি মামলার বিষয়ে অ্যামনেস্টি বিবৃতি দিয়েছে। বিচারধীন বিষয় নিয়ে সরকার বিশেষ কোনো মন্তব্য করবে না।’
ওদিকে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ সাতটি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টিতে অভিযুক্ত হয়েছেন। বলা হয়, ‘বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিশ্বের একমাত্র আদালত যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইসিটি-র মৃত্যুদ- কমানোরও নজির রয়েছে।’
এ নিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কথা বলে অ্যামনেস্টি যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতেই হবে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।’’
তাঁর কথায়, ‘‘অ্যামনেস্টি মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে নিজেকে দাবি করলেও, ঐ বিবৃতির মাধ্যমে মানবাধিকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। পক্ষ নিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের। তারা চায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের কোনো বিচার না হোক। এই বিচার ভ-ুলের জন্য নেমেছে তারা। তাদের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে গেছে এই বিবৃতির মাধ্যমে।’’ রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘অ্যামনেস্টির কথা মেনে নিলে ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়েলের যাঁরা আয়োজন করেছিলেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনতে হয়।’’