অসহায় এরশাদের পাশে নেই কেউ

1449769322সিটিএন ডেস্ক:
অসহায় হয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এমন অভিযোগ করেছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীতে জাপার উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জাপা চেয়ারম্যান এ অসহাত্বের কথা প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত অনেক শীর্ষ নেতা বিব্রত হন।
তারা বলেন, প্রতিটি মিটিংয়ে আমরা এরশাদের সঙ্গে উপস্থিত হই, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কর্মকা- বাদ দিয়ে তার ও দলের জন্য সময় ব্যয় করি। যারা দলের সাংগঠনিক কর্মকা-ে নিয়মিত ভূমিকা রাখেন না, তাদের নাম স্পষ্টভাবে বললে বিষয়টি আরো খোলাসা হতো বলে মনে করেন ওই নেতারা।
দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পার্টির চেয়ারম্যানের এ ধরনের মন্তব্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের হতাশ করলেও পার্টিতে অবস্থান নেয়া সুবিধাভোগী নেতাদের জন্য অশনি সংকেত। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো নেতা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে রাজি হননি। ওই দিনের পর থেকে পার্টির সব স্তরের নেতাকর্মীরা নানা হিসাব-নিকাশ করে কথা বলছেন। এড়িয়ে যাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীদের।
জাপা সূত্রে জানা যায়, পার্টির ৪০ জন এমপি থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা দলের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন না। এছাড়া অনেক বিত্তশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শীর্ষ নেতা আছেন, যারা পার্টির জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য আছে, তারাও এখন পার্টির চেয়ারম্যানকে এড়িয়ে চলছেন। মুখ ফিরিয়ে রাখছেন পার্টির সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকা- থেকে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, এর কারণ হচ্ছে পার্টির কয়েক ব্যক্তির স্বৈরাচারী কর্মকা-।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা বলেন, তাদের বিরূপ কর্মকা- পরিচালনা বন্ধ হলে এরশাদ সহযোগিতাকারী আগ্রহী নেতাদের সার্বিক সাহায্য পাবেন বলে তার বিশ্বাস।
অন্যদিকে দলের মধ্যে পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশনের শক্তিশালী বলয়ে থাকার কারণে অনেকে নেতাই প্রকাশ্যে পার্টির চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে নিষ্ক্রিয়তা দেখান। ফলে নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে শুধু দিনের পর দিন এরশাদনির্ভর হচ্ছে জাপা। এমন বক্তব্য পার্টির একাধিক নেতার।
অপরদিকে সেদিনের সভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি খুব করুণ কণ্ঠে বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে পাটির মাত্র ৫১ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এটি লজ্জাজনক আমাদের জন্য। একটি পুরাতন দল হয়েও আমরা প্রার্থী খুঁজে পাই না।
তিনি বলেন, ২৭টি কাউন্সিল মিটিং করছি, কাউকে পাইনি, আমি একা একা করছি। আরো ২৬টি কাউন্সিল মিটিং করতে হবে। পার্টির শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে এরশাদ বলেন, একটি পয়সা কেউ দলের জন্য সাহায্য করে না, পাশে কাউকে পাচ্ছি না।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, কেউ এগিয়ে না আসলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কাজ করে যাবার অঙ্গীকার করেন নেতাদের সামনে তিনি। বিগত মিটিংগুলোতে দলের মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশংসা করলেও এ মিটিংয়ে বাবলুর উপস্থিতিতে তার নাম না বলায় অনেক নেতাই সে সময় বলেন, মনে হয় গণেশ উল্টে গেছে। এরশাদের এ ধরনের বক্তব্য প্রদানকালে মঞ্চে বসা বাবলুকে বেশ হতাশ দেখা যায়।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, জিয়া উদ্দিন বাবলুকে পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়ার পর সারাদেশের জাপার সাংগঠনিক জেলাগুলোতে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এ অভিযোগ করেন কয়েকটি জেলার নেতাকর্মী। তারা বলেন, বিগত বছরে দলের মহাসচিব পার্টির কর্মকা- পরিচালনা করতে গিয়ে সাংগঠনিকভাবে বেশ হিমশিম খেতে হয়। তার পছন্দ মতো কমিটি না হওয়ায় অনেক জেলায় কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করতে দলের চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান। পার্টির প্রধানও তার কথামত এসব কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন। এজন্য ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, কুমিল্লা জেলাসহ একাধিক জেলায় পার্টির মধ্যে এ বিশৃক্সখলা সৃষ্টি হয়। ফলে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হয়ে পড়ে জাপার অনেক জেলার সাংগঠনিক কর্মকা-। ঘটেছে বিভিন্ন ঘটনাও।
ইতিমধ্যে ফেনী জেলার সব নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান, কুমিল্লা দ্বিধাবিভক্তি কমিটি, অনেক জেলায় তৃণমূলে কমিটি গঠন না করে জেলা সম্মেলন করার কারণে দলে বিশৃঙ্খলা আরো বেশি বেড়ে যায়। কথায় কথায় কেন্দ্র ও জেলার ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার ইত্যাদিসহ পার্টিতে দিনের পর দিন ঘটছে অহরহ ঘটনা। এসব ঘটনার কারণে সক্রিয় নেতারা নিষ্ক্রিয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। যার ফলে পার্টিতে কোনো নেতার একনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে না এরশাদ। একই ঘটনা ঘটেছে পৌর নির্বাচনে পার্টির মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে। পর্যাপ্ত প্রার্থী না থাকায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন দলের চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর প্রতিক্রিয়া জানতে তার ব্যবহƒত মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মানবকণ্ঠ


শেয়ার করুন