অসচ্ছল শ্রমিকের সন্তানের উচ্চশিক্ষায় ৩ লাখ টাকা

Labour-walfare-thereport24অসচ্ছল শ্রমিকের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা সহায়তার বিধান রেখে ২০১০ সালের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধিমালার সংশোধন চূড়ান্ত করেছে সরকার।
একই সঙ্গে সংশোধিত বিধিমালায় শ্রমিকদের বিশেষ দক্ষতার জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় স্থায়ী অক্ষমতায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সহায়তার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চূড়ান্ত করা বিধিমালাটি গেজেট আকারে জারির জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. ফয়জুর রহমান। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকেরও দায়িত্ব পালনকারী এ কর্মকর্তা রবিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংশোধিত বিধিমালায় নতুন কিছু বিষয় আমরা যুক্ত করেছি। অসচ্ছল শ্রমিকদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় সহায়তা, কর্ম দক্ষতা ও নারী শ্রমিকদের মাতৃত্ব কল্যাণে সহায়তাসহ কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।’
এ ছাড়া শ্রমিকদের সহায়তার সর্বোচ্চ সীমা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। ‘শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধিত) বিধিমালা ২০১৫’-এর গেজেট জারি হলেই এটি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, শ্রমিক কল্যাণে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিশেষ ডাক্তার, চিকিৎসক নিয়োগে বা মহামারিতে আক্রান্ত শ্রমিকদের মেডিকেল ক্যাম্প বা ক্লিনিককে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেবে সরকার।
অসচ্ছল শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে টিউশন ফি ও শিক্ষা উপকরণের জন্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া যাবে ।
স্থায়ীভাবে অক্ষম বা মৃত্যু হলে তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা দেওয়া যাবে বলে নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য শ্রমিকরা আবেদন করে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা নিতে পারবেন। তবে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা সহায়তার বিধান রয়েছে বিধিমালায়।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের মাতৃত্ব কল্যাণে তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া যাবে। বিশেষ দক্ষতা দেখানো শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা সহায়তা বিধান যুক্ত হয়েছে বিধিমালায়।
সংশোধিত বিধিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগে দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে সহায়তার জন্য আবেদনের বিধান ছিল। সে সময় বিশেষ কারণে বাড়তি ২১ দিনের মধ্যে আবেদনের সুযোগ ছিল।
বর্তমানে ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। বিশেষ কারণে আরও ৪৫ দিন পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ থাকবে।
‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬’-এর আওতায় ২০১০ সালে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধিমালা করা হয়েছিল।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী, শিল্প প্রতিষ্ঠানের এক বছরের লভ্যাংশের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়। তবে পোশাক কারখানাগুলোকে এ তহবিলের বাইরে রাখা হয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ফাউন্ডেশনের তহবিলের ১০৩ কোটি টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে। এর থেকে প্রাপ্ত মুনাফা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে ইতোমধ্যে তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৯৯ জনকে এক লাখ টাকা করে (প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুমোদন সাপেক্ষে) সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের তহবিলের আওতায় ২০১৩ সাল থেকে শ্রমিকদের জন্য জীবন বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে গোষ্ঠীবীমা স্কিম চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব), বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক লীগ ও মোটরযান মেকানিক শ্রমিক ফেডারেশনের ২ হাজার ৯৫ জন শ্রমিক স্কিমের আওতায় এসেছেন।


শেয়ার করুন