কুতুবদিয়ায় জোয়ার-ভাটা চলছে-

অমাবস্যার জোয়ারে কুতুবদিয়া উপকূলের ৩০ গ্রাম প্লাবিত

Amabashar Jour news-pic-2

নিজস্ব প্রতিনিধি,কুতুবদিয়া:

অমাবস্যার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে কুতুবদিয়া উপকূলের ৪ ইউনিয়নের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে নোনা জল লোকালয়ে ঢুকে পড়লে প্রায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে ঐ এলাকার হাজারো মানুষ নোনা পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার হাজার হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে এবং হাজার হাজার একর ফসলী জমি অনাবাদী হয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার (৪জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আলী আকবর ডেইল,বড়ঘোপ,উত্তর ধুরুং ইউনয়নের শত শত পারিবার নোনা জলে প্লাবিত হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মোঃ নজরুল ইসলামের সাথে দেখা হলে তিনি জানান, গত ২১ মে ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁেধর মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ভাঙন বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে অমাবস্যার জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এতে উত্তর ধুরুং,আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরীপ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যথাযথ ক্ষতির রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে। উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধূরী বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে উত্তর ধুরুং এলাকার কাইছারপাড়া, চুল্লারপাড়া,চরধুরুং,নয়াকাটা, আকবরবলীপাড়া, ফয়জানির বাপের পাড়া,উত্তর সতর উদ্দিনসহ ১০গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পাউবোর প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর আঘাতের সময় শত শত পরিবার জোয়ারের নোনা জলে ভেসে গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে অমাবষ্যার জোয়ারেও পূনরায় প্লাবিত হয়েছে এসব এলাকা। বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধূরী বলেন, আজম কলোনী, মধ্যম অমজাখালী, দক্ষিণ অমজাখালী এলাকায় ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর মেরামত না করায় গতকাল রবিরার দুপুরে ভাঙা বাঁধ দিয়ে নোনাজল গ্রামাঞ্চলে ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। রোয়ানুর আঘাতে নোনা জলে ডুবে যাওয়া পুকুরগুলো ঐ এলাকার লোকজন নিজেরা সেচ দিয়ে বৃষ্টির পানির জন্য খালি করে রাখে। গতকাল সোমবার দুপুরে চলতি অমাবষ্যার জোয়ারে পুকুরগুলো আবারো নোনাজলে ভরে গেছে। আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযুদ্ধা নুরুচ্ছাফা জানান, কুমিরারছড়া জেলেপাড়া, আনিচের ডেইল,পূর্বতাবলেরচর, পশ্চিম তাবলেরচর, হায়দারবাপেরপাড়া, তেলিপাড়া, কাহারপাড়া, কাজিরপাড়া এলাকায় বাঁধ ভাঙা থাকায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে শত শত একর ফসলি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। একই রুপ লেমশীখালী ইউনিয়নের সতর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পেয়ারাকাটা এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কথা জানান ঐ ইউপির চেয়ারম্যান আকতার হোছাইন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধূরী জোয়ারে প্লাবিত আলী আকবর ডেইল ও উত্তর ধুরুং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গতকাল রবিবার বিকালে পরিদর্শন করেন। পূনঃপ্লাবিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণকারী সরকারি ও এনজিওগুলোর তালিকাভূক্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিকট জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ পৌছে দেয়ার জন্য নিদের্শ দেন। প্লাবিত এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর সড়ক ও সড়ক বিভাগের ৩০ কিলোমিটার সড়ক জোয়ারের পানির স্্েরাতে ভেঙে গেছে বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা হাফেজ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, অমাবষ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে নোনা জলে প্লাবিত জমিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভাঙন বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে দ্বীপের হাজার হাজার একর ফসলি অনাবাদি হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা ও বড়ঘোপ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব আওরঙ্গজেব মাতবর জানায়,ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে দ্বীপের চতুর পাশে বেড়িবাধঁ বিলীন হওয়ায় গত ২দিন ধরে অমাবষ্যার জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাঁটা চলতে থাকলে এসব এলাকায় লোকজন বসবাস করা সম্ভব হবে না। এর সাথে সাথে এসব এলাকার হাজার হাজার একর ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। আগামী পূর্ণিমার জোয়ার আসার আগে বিলীন হওয়া বেড়িবাধঁ জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ করে যাতে বর্ষা মৌসুম ঠেকানো যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি দৃষ্ঠি আকর্ষন করেন।


শেয়ার করুন