অবসর সুবিধা পাবেন না মোশতাক, জিয়া ও এরশাদ

রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্ত মাসিক বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা ও মন্ত্রীর সমমর্যাদায় চিকিৎসা ভাতা পাওয়ার বিধান রেখে ‘রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন ২০১৬’ পাস করেছে সংসদ।

ছয় মাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করলেও রাষ্ট্রপতিরা এ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে বিলের ৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘কতিপয় ক্ষেত্রে অবসরভাতার অধিকারের অপ্রয়োজ্যতা’ শর্ত অনুযায়ী সাবেক রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালনকারী মোশতাক আহমদ, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ সুবিধা পাবেন না।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে মঙ্গলবার বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন সংসদকার্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। পরে বিলটি কন্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর আনীত সংশোধনী ও জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

জাতীয় পার্টির এমপিরা রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালনকারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অবসর সুবিধা দেওয়ার জন্য বিলটি জনমত যাচাইয়ে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। তারা দাবি করেন যেহেতু তিনি পরে জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, সেহেতু তিনি তার দাবিদার। গনভোট হলে এরশাদ এক্ষেত্রে ৮০ ভাগ ভোট পাবেন বলে দাবি করা হয়।

পরে এ বিষয়ে মন্ত্রী সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, এ বিষয়ে তারা চুপ থাকলেই ভালো করতেন।

বিলে অবসরভাতা না পাওয়ার র্শতে বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অবসরভাতা ও অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না যদি তিনি-ক) রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠান শেষে এমন কোনো দপ্তরে, আসনে, পদে বা মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন বা করেছিলেন এবং সেজন্য তিনি সংযুক্ত তহবিল থেকে বেতন বা অন্য কোনো সুবিধা পাচ্ছেন বা পেয়েছিলেন; খ) এ আইনের অধীন অবসরভাতার প্রাধিকার অর্জন করার পর কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হন; অথবা গ) অসাংবিধানিক পন্থায় বা অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন মর্মে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত হন।

রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা বিল ২০১৫ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হওয়ায় প্রেসিডেন্টস পেনসনস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯-এর কার্যকারিতা লোপ পায়। তারই প্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি পরিমার্জন করে নতুনভাবে এই বিল আনা হয়। এর আগে ২০১৩ সালে আইনী শূণ্যতা সমাধানকল্পে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

বিলে বলা হয়েছে, অবসরকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রীয় খরচে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন এটেন্ড্যান্টসহ একটি দপ্তর পরিচালনার সুবিধা পাবেন। এছাড়া বাসার একটি টেলিফোনের বিল রাষ্ট্র নির্বাহ করবে। অবসরকালীন সময়ে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট লাভ করবেন।

অবসর ভাতা গ্রহণের পর মৃত্যু হলে সাবেক রাষ্ট্রপতির বিধবা স্ত্রী বা ক্ষেত্রমতে বিপত্মীক স্বামী মাসিক অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু অবসরভাতা পাবেন।

এছাড়া কোনো রাষ্ট্রপতি অবসরভাতার পরিবর্তে ইচ্ছা করলে এ ধারার বিধান অনুযায়ী আনুতোষিক গ্রহণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আনুতোষিকের পরিমাণ হবে এক বছরের জন্য প্রদত্ত অবসরভাতার ততগুণ হবে যত বৎসর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।


শেয়ার করুন