বাইশারীতে বহিরাগত প্রভাবশালী কর্তৃক

অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কৃষি জমি ভরাট অব্যাহত

qawe1233মুফিজুর রহমান, বাইশারী :

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কৃষি জমি ভরাট অব্যাহত রয়েছে। ইউনিয়নের মধ্যম বাইশারী, হলুদিয়াশিয়া, উত্তর বাইশারী, যৌথখামার, নারিচবুনিয়া, করলিয়ামুরা সহ অন্যান্য এলাকায় কৃষি জমি ভরাট করছে প্রভাবশালীরা। তাছাড়া আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পাহাড়ের জমি বিক্রি করে যাচ্ছেন অসহায় লোক সাধারণ। এতে কৃষি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদ মাধ্যম সুত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে কৃষি জমি সুরক্ষায় “কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন-২০১৫” নামে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। তাতে কৃষি জমি বিনষ্ট করলে আইনে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়র রোধ করে ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ ও খাদ্যশষ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং কৃষিজমি ও কৃষিপ্রযুক্তির প্রায়োগিক সুবিধার সুরক্ষা সহ ভূমির পরিকল্পিত এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিৎ করাই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে।
কৃষি জমি নষ্ট করে আবাসন, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোন অকৃষি স্থাপনা নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কৃষি জমি যে কেউ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারলেও তা আবশ্যিকভাবে শুধু কৃষি কাজেই ব্যবহার করতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে জমির মালিকানা সরকারের উপর ন্যস্থ হবে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে আবাসন, শিল্পকারখানা বা রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষি জমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ও জলাশয় বা জলমহাল বিনষ্ট হয়ে খাদ্যশষ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। ঘটছে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়।
সরজমিনে দেখা যায়, আইনের তোয়ক্কা না করে বাইশারী বাজার সংলগ্ন মধ্যম বাইশারী এলাকায় বহিরাগত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি অপরিকল্পিত ভাবে বহুতলভবন ও রাবার সামগ্রী পক্রিয়াজাত করার জন্য ফ্যাক্টরী নির্মাণ করতে কৃষি জমি বেষ্টনি দিয়ে মাটি ভরাটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনবসতির পার্শ্বে এভাবে রাবার ফ্যাক্টরী নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বাইশারীতে পাহাড় কেটে ফসলি জমি ভরাট করে যেভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরী হচ্ছে, তার প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে। নগরায়নের ভয়ঙ্কর আগ্রাসন শুধু বাইশারী নয়, দেশের যোগাযোগ সংযোগে থাকা সব গ্রামও গিলে খাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বনির্ভর। কৃষকদের রক্ত-ঘাম এবং সৃজনশীলতার দামে এই অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যে হারে পাহাড় কেটে ফসলি জমি নতুন গ্রাম্য এলিট শ্রেণীর বাড়ি নির্মাণে অকাতরে বলি হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে বান্দরবানের সবচেয়ে সমতল এলাকা এবং রাবার শিল্প নগরী হিসাবে পরিচিত বাইশারীবাসীর খাদ্য পরিস্থিতি নিকট ভবিষ্যতে ভয়ংকর সংকটে পড়তে পারে।

এসব প্রভাবশালী ভয়াল অজগরের হাত থেকে কৃষিজমি বাঁচাতে না পারলে বাইশারীর উন্নতি সম্মৃদ্ধির বারোটা বাজতে যে বেশি বিলম্ব নেই, উপজেলা নীতি নির্ধারকেরা হলুদ বাতির নির্দেশনা কি পড়তে পারছেন না! এভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরী করে আবহমান গ্রাম বাংলার অংহকার ও গর্বের সবুজ-সজিব পরিবেশ ধংশ করে দিচ্ছে।
কৃষি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরীর ব্যাপারে জরুরী ভাবে পদক্ষেপ নিতে বাইশারী ইউনিয়নের পরিবেশবাদীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করছেন।


শেয়ার করুন