খসড়ায় অনুমোদন মন্ত্রিসভার

অনুমতি ছাড়া মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করলে শাস্তি

সাজার মেয়াদ কমিয়ে ও জরিমানা বাড়িয়ে ‘মানবদেহে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন-২০১৭’এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে সরকারের অনুমতি ছাড়া মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না কোনো হাসপাতাল। একই সঙ্গে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ করা হযেছে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় নিয়মিত বৈঠকে এই আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ শামীম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আশরাফ শামীম বলেন, এ আইনটি ১৯৯৯ সালের। সংশোধিত আইনে কিছু সংজ্ঞা পরিমার্জিত ও পুনর্গঠিত হয়েছে এবং আইনে কিছু বিষয় সংযোজিতও হয়েছে। আগের আইনে নিকট আত্মীয় বলতে পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রী। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজনের ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয় হওয়ার আবশ্যকতা নেই। তিনি বলেন, এ আইনে অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ বলতে কিডনি, হৃদপিন্ড, চোখ, ফুসফুস, টিস্যু, যকৃত, অন্ত্র, অস্থি ও অস্থিমজ্জাকে বোঝাবে। একজন ব্যক্তি নিকটাত্মীয় একজনকে অঙ্গ দান করতে পারবেন। প্রস্তাবিত আইনে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেয়ার ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞায় সম্পর্কের পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। নিকটাত্মীয় বলতে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, রক্তের সম্পর্কিত চাচা-চাচি, মামা-মামি, নাতি-নাতনি, মাতাতো, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই-বোনদের বোঝাবে।
আশরাফ শামীম বলেন, বিদ্যমান আইনে কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনের সহায়তা করলে সর্বোচ্চ সাত বছর এবং সর্বনিম্ন তিন বছর মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড অথবা কমপক্ষে তিন লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান আছে। এখন প্রস্তাবিত আইনে কয়েকটি ভাগে এই সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এরমধ্যে কোনো ব্যক্তি নিকট আত্মীয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য বা তথ্য প্রদানে উৎসাহিত বা ভীতি দেখালে এই আইনের অধীনে তা অপরাধ হবে এবং সে জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। উল্লেখিত বিধান ছাড়াও এই আইনের অন্যান্য বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। এই রকম আরও কয়েকটি ভাগে সাজা রাখা হয়েছে। তবে কোনো চিকিৎসক অপরাধী প্রমাণিত হলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। আগে এ আইন লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ জরিমানার বিধান ছিল। তিনি বলেন, এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। এই আইন পাশ হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে এই অনুমোদন নিতে হবে। তবে যেসব সরকারি হাসপাতালে বিশেষায়িত ইউনিট আছে তাদের এই অনুমতি লাগবে না।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, জীবিত ব্যক্তির জীবনধারণে কোনও ধরনের সমস্যা না হলে তিনি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। তবে চোখ ও বোনমেরুর ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় হওয়ার দরকার নেই। এক্ষেত্রে যেকেউ স্বেচ্ছায় অঙ্গ দান করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনানুগ উত্তরাধিকারীর লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গ নেয়া যাবে। মৃত ব্যক্তির ঘোষণার জন্য একটি কমিটি থাকবে, কমিটিতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের একজন মেডিসিন, একজন নিউরোলজিস্ট, একজন অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ক অধ্যাপক থাকবেন। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, দাতা মৃত হলে তার বয়স দুই বছরের বেশি ও ৬৫ বছরের কম হতে হবে। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। দাতা জীবিত হলে ১৮ বছরেরে কম এবং ৬৫ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। গ্রহীতার বয়স দুই বছরের কম ও ৭০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। তবে ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগীরা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে কর্নিয়ার ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য হবে না। এগুলো দেখভালের জন্য সব হাসপাতালে একটি করে মিডিক্যাল বোর্ড থাকবে। হাসপাতালের সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের একজন করে অধ্যাপক এবং হাসপাতালের পরিচালক বা একজন চিকিৎসক বোর্ডের সদস্য হবেন।
এছাড়া ১১ সদস্যের ক্যাটবেরিক জাতীয় কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্বদ্যিালয়ের ভিসি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। কেন এ আইনের প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবার উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যমান চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে এ আইনটি করা হয়েছে


শেয়ার করুন