মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায় : পাতলী-খরুলিয়ার ফসলি জমি বিরাণভূমি 

সিটিএন ডেস্কঃ

হরদম ৪০ টি ডাম্পার লাগিয়ে ফসলি জমির মাটি উত্তোলন করে ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। মানছেনা জরিমানা, আইন। প্রশাসনের নজরদারিতে ও থামানো যাচ্ছেনা মাটি বিক্রি। সকাল থেকে রাত কিংবা দিন সব সময় সড়কের উপর ৪০ টি মিনি ট্রাক মাটি ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। অনেকে মাটি কিনে ভরাট করছে বসতিভিটে। অনেকে আবার প্লট করে জায়গা বিক্রির জন্য ভরাট করে রাখছে।

সদরের পিএমখালী, ঝিলংজার বিস্তর্িীণ এলাকার ফসলি জমি বিরাণভূমিতে পরিনত হয়েছে। প্রায় এক হাজার হেক্টর ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার পরও পুণরায় মাটি উত্তোালণ করছে উক্ত সিন্ডিকেট।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ক্ষতিগ্রস্থ অন্তত ১০/১২ জন পিএমখালীর পাতলীর বাসিন্দা জানান, খরুলিয়ার চর এলাকা, উক্তরপাতলী, দক্ষিণ পাতলী, মুহসিনিয়াপাড়া, মাইজপাড়া, গোলারপাড়া, নয়াপাড়া,ডিকপাড়ার প্রায় ১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি থেকে মাটিকেটে ৪০টির মত ডাম্পার করে মাটি বিক্রি করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। তারা প্রশাসনের অভিযানের তোয়াক্ষা ও করেনা। উক্ত সিন্ডিকেট মাটি কাটার জন্য ডাম্পারের পাশাপাশি ব্যবহার করছে স্কেভেটর। বড় স্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির উপরিভাগ যেখানে ধানচাষের জন্য উপযোগি মাটি থাকে সেটি ধংস করে মাটি টানছে। এ সব মাটি ডাম্পার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রামু ও সদরের কয়েকটি ইটভাটায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাতলী ও খরুলিয়ার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গেল সপ্তাহে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমির নেতৃত্বে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। ২/৩ দিন মাটি উত্তোলন বন্ধ থাকার পর পুনরায় রাত ৮ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত ফসলী জমি থেকে মাটি টানছে উক্ত সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের অন্যতম হল খরুলিয়ার বাদশা মিয়ার পুত্র ছোটন , পিএমখালীর ডিকপাড়ার আবদুল হকের পুত্র নুরুল ইসলাম প্রকাশ ধলু, নয়াপাড়ার আবদুল্লাহ।

সাথে সরকার দলের নাম বিক্রি করে মাটি টানছে আরো একটি সিন্ডিকেট। দৈনিক ৪০ টির মত ডাম্পার কৌশলে তারাবি নামাজ আরম্ভ হলে মাটি টানা শুরু করে। সারা রাত চলে মাটি বিক্রি। দৈনিক ১০ লাখ টাকার মত মাটি বিক্রি করে বলে স্থাণীয়দের ধারনা।
এদিকে ফসলী জমিতে মাটি বিক্রির সুযোগ পেয়েছে এ বছর চলতি মওসুমে রাবার ড্যাম নষ্ট হওয়ায় পুরো জমি অনাবাদি থাকার কারনে। ফলে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে কোন ফসল না থাকায় ইচ্ছেমত মাটি কাটছে উক্ত সিন্ডিকেট। ফলে পরিবেশ বির্পজয়ের পাশাপাশি পুরো জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছ্ েমাটি উত্তোলণ বন্ধ না হলে আগামি মওসুমে কাংখিত ফলন হবেনা বলে জানান কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা। পাতলি এলাকার মোঃ আলম ও দিঘিরপাড় এলাকার ছৈয়দুল হক বলেন- আমরা আমাদের ফসলি জমি তেকে মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের খরুলিয়ায় বাজার করতে যেতে হয় এবং যারা মাটি বিক্রি করছে তাদের বাড়ি খরুলিয়ায় হওয়াতে আমরা প্রতিবাদ করে হুমকিতে আছি।

তাদের অভিযোগ এসিল্যান্ডের অভিযান চলাকালে একটি স্কেভেটর জব্দ করার পরও পুনরায় তারা মাটি টানছে রাতে। কেই মাটি কাটলে সংবাদ সদর এসিল্যান্ডকে জানানোর জন্য বলা হলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটর হুমকির কারনে হরদম মাটি কাটার খবর তারা জানাতে পারছেনা। মাটি কাটা বন্ধে স্কীম ম্যানেজার উত্তর পাতলীর আবদুল করিম সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবরে এলাকাবাসি অভিযোগ প্রদান করেছেন বলেও তারা জানান।
আবাদী জমিতে ’টপ সয়েল’ উত্তোলন এবং পরিবেশ বির্পযয়রোধে প্রশাসনের ভুমিকা বিষয়ে সদর উপজেলাসহকারি কমিশনার ভূমি নু এমং মারমা মং বলেন- আমরা মাটি কাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। গত ২২ এপ্রিলও পিএমখালীতে অভিযান চালিয়ে মাটি উত্তোলন করার অপরাধে স্কেভেটর জব্দ করেছি এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি। জড়িত থাকার অপরাধে ১ জনকে আটক করেছি। তিনি বলেন কেউ সুনিদিষ্টিভাবে অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া পাতলি এবং খরুলিয়ায় অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
খরুলিয়া,পিএমখালীর প্রবেশপথে প্রশাসনিক টহল জোরদার করলে টপ সয়েল বিক্রি করা যাবে বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্থ। ৪০ ডাম্পার কোন ফিটনেস না থাকা সত্তেও কিভাবে চলে তা খতিয়ে দেখাও প্রয়োজন। সবুজ ফসলি জমিকে বাঁচাতে ডাম্পার বন্ধের পাশাপাশি ম্যাজিষ্ট্রেসি অভিযান াারো জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্থরা।


শেয়ার করুন