আরটিএনএন :
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের ‘জঙ্গি আস্তানা’ দুটির আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে আইন শৃংখলাবাহিনী। বুধবার দুপুর থেকে আস্তানা দুটির ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বাড়ি দুটিকে ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
অভিযানকালে এলাকাবাসীকে ভিড় না করার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। দুপুর থেকে এলাকায় মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পুলিশের সোয়াত বাহিনীর একটি অগ্রগামী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
এর আগে মৌলভীবাজারের দুই ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চলাকালে উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থলের আসেপাশে ভিড় না করে নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে অবস্থানের আহ্বান জানান পুলিশের এআইজিপি মনিরুজ্জামান।
বুধবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাধ্যমে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চলাকালে জঙ্গিদের সেকেন্ডারি আস্তানা থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় উল্লেখ করে মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে আইন শৃংখলাবাহিনীকে সহায়তা করার আহবানও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সিলেটের পর এবার মৌলভীবাজারে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে দুটি বাড়ি মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র্যা ব। এর মধ্যে একটি বাড়িতে পুলিশ ঢোকার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পাশের বাড়িটির বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
একটি আস্তানা মৌলভীবাজারে পৌর শহরের বড়হাটে তিনতলা একটি ভবনে এবং অন্যটি মৌলভীবাজার শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ফতেহপুরের খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকায় আরেকটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে।
সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ হওয়ার একদিন পরই এবার মৌলভীবাজারে দুটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখার ঘটনা ঘটল।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহাজালাল বলেন, ভোররাতের দিকে অভিযান শুরু করলে জঙ্গিরা প্রথমে গুলি করতে থাকে এবং একের পর এক গ্রেনেড ছুঁড়েও মারছে।
মৌলভীবাজার পুলিশের এএসপি (সদর দপ্তর) বলেন, আমরা অভিযানে আছি। তারা ভেতর থেকে গ্রেনেড চার্জ করছে। এরপরও জঙ্গি কি-না কোন সন্দেহ আছে?
তিনি জানান, এরই মধ্যে রাত থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে আস্তানার বাড়ি দু’টি ও আশেপাশের এলাকা থেকে কৌশলে সাধারণ বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ দু’টি আস্তানাতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। জঙ্গিদের কোণঠাসা করে তুলতে এরই মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট ও সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকায় যে দুটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশ ঘিরে রেখেছে সে দুই বাড়ির মালিক একই ব্যক্তি।
বাড়ির মালিকের নাম সাইফুর রহমান। তিনি সপরিবারে লন্ডনে থাকেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জালাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বড়হাট এলকায় তিনতলা ও খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের যে একতলা বাড়িটি রয়েছে সে দুটি বাড়ির মালিক সাইফুর রহমান।
এর মধ্যে নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছে। এছাড়া গোলাগুলিও চলছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় একজন জানান, সরকার বাজারের বাড়িটি ঘিরে ওই এলাকায় সকালে বিকট আওয়াজ শোনা গেছে। এরপর সকাল থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বড়হাটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অভিযানস্থলের অদূরে দমকল ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ দুটি আস্তানাতেই জঙ্গিরা রয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই আস্তানা দু’টি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। রাত থেকে কৌশলে আমরা এলাকাবাসীকে সরিয়ে নিতে পেরেছি।
তিনি আরো জানান, ভোররাতের দিকে অভিযান শুরু করলে জঙ্গিরা প্রথমে গুলি করতে থাকে এবং একের পর এক গ্রেনেড ছুঁড়েও মারছে।