মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচন

লাইনম্যান বাশি যখন বিএনপির প্রার্থী…

3শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
বর্তমানে বিএনপি সরকারের বিরোধীদল নয়। কিন্তু বৃহৎ দল হিসেবে মাঠের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি। সে ধারায় চলমান দলীয় ব্যানারে ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিই। দেশের সব জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাথে শক্তভাবে লড়ছে বিএনপির প্রার্থীরা। সদ্য সমাপ্ত প্রথম দফার পৌরসভা নির্বাচনে সে অবস্থান জানান দিয়েছে বিএনপি। সে কারণে চলমান নির্বাচনেও সরকারী দল আওয়ামী লীগ একমাত্র বিএনপিকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপিও আওয়ামী লীগের সাথে লড়ার জন্য তুখোড় প্রার্থী মনোনিত করেছে প্রথম দফা ইউপি নির্বাচন ও দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনে। কিন্তু মহেশখালী পৌরসভা বিএনপির ক্ষেত্রে এই চিত্রের উল্টো ঘটেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র মতে, মহেশখালী পৌরসভায় বিএনপির একক মনোনিত প্রার্থী হলেন মহিউদ্দীন বাশি। মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সূত্র মতেও মহিউদ্দীনই তাদের একক প্রার্থী। কেন্দ্রের তালিকায়ও মহিউদ্দীন বিএনপির প্রার্থী। কিন্তু প্রশ্ন, মহিউদ্দীন বাশি’টা কে? মহেশখালী পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এই প্রশ্নটি। এমনকি সাধারণ ভোটারদের কাছেও কতটুকু পরিচিত বিএনপি প্রার্থী বাশি? সে প্রশ্নও পৌরসভা জুড়ে ঘুরছে।
এই প্রশ্নের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, মহিউদ্দীন বাশি আসলে বিএনপির কেউ না। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ। তবে গত দু’বছর ধরে তিনি পৌর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক। একমাত্র তিনিই এই কমিটির কর্ণধার! তার সাথে জানাশোনা কেউ নেই। মূলত তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউল্লাহর আশির্বাদপুষ্ট হয়ে শ্রমিকদল নেতা বনে গেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেশাগত জীবনের প্রথম ধাপে মহিউদ্দীন বাশি ছিলেন ভিসিআর হল ব্যবসায়ী। একসময় গোরকঘাটা বাজারে তার ছিল ভিসিআর হল। সে সময় ‘ভিসিআর বাশি’ হিসেবে পরিচিত ছিল তার। ভিসিআর হল বিলুপ্ত হলে তিনি মহেশখালী উপজেলা জীপ মালিক সমিতির লাইন ম্যানের দায়িত্ব নেন। আতাউল্লাহর ব্যক্তিগত কর্মচারী হওয়ার বদৌলতে তিনি লাইনম্যানের দায়িত্ব পায় বাশি। বর্তমানেরও তিনি এই দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এই কারণে এখন তাকে ‘লাইনম্যান বাশি’ হিসেবে চিনে সবাই। মাদকসেবী ও জুয়াখোর হিসেবেও তার বদনাম রয়েছে। আগেতো চিনতো না; বতর্মানে বিএনপির মতো শক্তিমান দলের প্রার্থী হলেও এখনো বাশিকে চিনে না ৮০ ভাগ ভোটার। অথচ এই বাশিই লড়ছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের শক্তিমান প্রার্থী মকছুদ মিয়ার বিরুদ্ধে! এ নিয়ে পৌরসভা নয় পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। খোদ বিএনপি ঘরানা থেকে সাধারণ মহল; সর্বত্র চলছে এই ঝড়। একই সাথে চরম ক্ষুব্ধতা বিরাজ করছে বিএনপি অঙ্গনে।
সবার অভিমত, বাঘের সাথে লড়াই করতে বিড়াল ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। মকছুদ মিয়ার সামনে মহিউদ্দীন বাশি বিড়াল ছাড়া কিছুই নয়। তাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার আজম থাকলেও মকছুদ মিয়ার নির্বাচনী মাঠের এখন অনেকটা ফাঁকা। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, কি দেখে মহিউদ্দীন বাশিকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে?

অন্তরালে খুঁজতে গিয়ে বাশিকে প্রার্থী করার নেপথ্যে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ ও রহস্যময় তথ্য। জানা গেছে, মহেশখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের প্রার্থী মকছুদ মিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউল্লাহর আপন ভাই। গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মকছুদ মিয়ার জন্য প্রকাশ্যে কাজ করেছেন আবু বকর ছিদ্দিক ও আতাউল্লাহ। কিন্ত এবার সরাসরি দলীয় ব্যানার ও প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তারা প্রকাশ্য হতে পারবেন না। এই কারণে অনেক শক্তিমান নেতা থাকা সত্ত্বেও আতাউল্লাহ ও আবু বকর ছিদ্দিক ‘কেরামতি’ করে রাস্তা থেকে ধরে এনে ‘বিড়াল’ বাশিকে বিএনপির প্রার্থী বানিয়ে দিয়েছেন। বাশি প্রার্থী হলে কৌশলগতভাবে মকছুদ মিয়ার ভোট বেড়ে যাবে। তাই তার পক্ষে ডামি হিসেবেই বাশিকে প্রার্থী করেছেন- এই অভিযোগটি এখন মহেশখালী পৌরসভা বিএনপি অঙ্গনে সর্বত্র আলোচনায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, মহেশখালী পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামের পুত্র ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট ফারুক ইকবাল। কিন্তু তার আবেদন আমলে নেননি উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। একচেটিয়াভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাশিকে প্রার্থী বানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক। আর ‘পুতুলের’ ভূমিকা পালন করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট নূরুল আলম। এতে মকছুদ মিয়ারও হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক গতকাল রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এরকম কোন কিছুই আমরা করিনি। এটা প্রশ্নই আসে না। আমার আমি রাজনীতি আমি করি, ভাইয়ের রাজনীতি করে ভাই করে। আমি দলকে ভাইয়ের অনেক উর্ধ্বে রাখি। আর কেউ প্রার্থী হতে আগ্রহী না হওয়ায় বাশিকে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে।’

সভাপতি এডভোকেট নূরুল আলম বলেন, ‘প্রার্থী বিষয়ে সব কিছু জানবে আবু বকর ছিদ্দিক। তার কাছে জেনে নেন।’


শেয়ার করুন