কারা এই চাকলাদার ও ‘ডলার আলী’!

ফ্লোরিডা বিএনপি নিয়ে বাণিজ্য

1280px-বাংলাদেশ_জাতীয়তাবাদী_দলের_পতাকা.svgনিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিএনপি নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য শাখার আগামি সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অপরাধী চক্র এখন থেকেই নানা অপকর্ম শুরু করেছে। মোহাম্মদ চাকলাদার ও আরিফ আহমদ আশরাফ নামের দুই ব্যক্তি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য নানাভাবে তদবিরে রয়েছেন, যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধী হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন এবং সাজাও ভোগ করেছেন। এদের মধ্যে আরিফ আহমদ আশরাফ তার নানা অপকর্মের জন্য ‘ডলার আলী’ ও ‘হুন্ডি আশরাফ’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছেন। এদের সাথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক। এদের ঘরেই প্রতিদিন রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আড্ডা বসে।
একাধিক সূত্র মতে, মোহাম্মদ চাকলাদার ও আরিফ আশরাফ চক্রের হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে নাঠে নামছেন। ওই দুই ব্যক্তিকে প্রধান করে ফ্লোরিডা বিএনপির কমিটি ঘোষণার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিএনপি নেতা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনকে ফ্লোরিডায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হয়েছে।

কে এই আশরাফ ও চাকলাদার
আরিফ আহমদ আশরাফ ও মোহাম্মদ চাকলাদার, এই দুই প্রবাসি বর্তমানে ফ্লোরিডা শহরের বাইরে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে চাকলাদার হোম স্টেটে ও আশরাফ ফোর্থ মায়ার্সে বসবাস করেন। ফ্লোরিডায় অবস্থান না করেও তারা ফ্লোরিডা বিএনপির কমিটি গ্রাস করার অপচেষ্টা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্লোরিডার একাধিক সূত্র মতে, আরিফ আহমদ আশরাফের ভাই মুজিবুর রহমান বর্তমানে ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই সূত্র ধরে আরিফ আহমদ আশরাফের সাথে আওয়ামী লীগের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। এই হৃদ্যতার সম্পর্কের কারণেই আরিফ আহমদ আশরাফের বাড়িতে প্রায় প্রতি রাতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের আসর বসে।
অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সাথে চক্রান্ত করেই ফ্লোরিডা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছেন এই আরিফ আহমদ আশরাফ ওরফে ডলার আলী ওরফে হুন্ডি আশরাফ।

কে এই ‘ডলার আলী’ ও ‘হুন্ডি আশরাফ’
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্থ সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য মতে, এই আরিফ আহমদ আশরাফ ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত সোনা চোরাচালানি ‘সোনা রফিকে’র সহযোগী। তিনি সোনা রফিকের চোরাচালান ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। পরে সোনা রফিকের একটি বড় চালান বিক্রি করে দিয়ে এই আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান।
সূত্র গুলো জানান, ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়েই আশরাফ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ‘ডলার আলী’ নামে কুখ্যাতি পান। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হত্যা মামলায় জেলও খেটেছেন। পরে নিজের নাম পাল্টে ফ্লোরিডায় বসবাস শুরু করেন। এখানে আসার পর এক প্রবাসি বাংলাদেশির স্ত্রী, এক সন্তানের জননীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন।
ওই সুত্রগুলো মতে, আশরাফ ফ্লোরিডায় বসে মেক্সিকোতে মানবপাচার শুরু করেন। মানবপাচার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী কর ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নানা ধরণের অপরাধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ‘বেল্ট’ও তার পায়ে রয়েছে। এই বেল্ট তাকে প্রতিনিয়ত পায়ে লাগিয়ে পথ চলতে হয়।
এই আশরাফই ২০১১ সালে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে ফ্লোরিডায় সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। একই সময়ে তিনি তৎকালিন বিতর্কিত মঈন ইউ আহমদকেও সংবর্ধনা দিয়েছিলেন একাধিকবার। এই সংবর্ধনায় দিনাজ খানও অতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
আশরাফ ওরফে ‘ডলার আলী’ই ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পিয়ার আলীকে নির্বাচন দাঁড় করিয়েছিলেন।

তারা কী করেন, কী করছেন
আরিফ আহমদ আশরাফ ও চাকলাদার বর্তমানে ফ্লোরিডায় বিএনপির যুক্ত নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে একটি গ্রুপকে সাথে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ফ্লোরিডা বিএনপির পকেট কমিটি ঘোষণার চেষ্টায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে অবৈধ ওই কমিটিকে অনুমোদন দেয়ার জন্য সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের যোগসাজস করায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিলনকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন। আগামি ১০ জানুয়ারি এই সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।
ফ্লোরিডা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, যেহেতু এই দুইজন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন গুলোর নিয়মিত পৃষ্টপোষক, তাই তারা কোন ভাবেই বিএনপি কেউ হতে পারেন না।
তারা দাবি করেন, এই চক্রটি গোপন কমিটি ঘোষনা জন্য তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। যা বিএনপি নেতা-কর্মীরা কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
বিএনপি নেতাদের দাবি, বিএনপির হাইকমান্ডকে এটা মনে রাখতে হবে আহমদ আশরাফ-চাকলাদার চক্র কোন ভাবেই বিএনপির কেউ নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রতিনিয়ত অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত তারা তো সবসময় অপরাধই করবে। আর তার দায়ভার যাবে বিএনপির উপর।


শেয়ার করুন