মুমিনের প্রতিদিন নববর্ষ

ফয়জুল আল আমীন

উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় Islamic233-400x266মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে জানা যায়, তাতে রয়েছে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্মীয় সংস্কার ও ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। আমরা আজ ইংরেজি নতুন যে বছরকে স্বাগতম জানাচ্ছি তা সংস্কার করার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইস্টারকে (অমুসলিমদের উৎসব) সঠিক সময়ে আনা। রোমানরা ১ জানুয়ারি উৎসর্গ করে তাদের প্রাচীন ধর্ম অনুযায়ী সূচনা ও রূপান্তরের ঈশ্বর হিসেবে খ্যাত জানুসকে। জানুস (ঔধহঁং)-এর নামানুসারেই বছরের প্রথম মাসকে তারা ‘জানুয়ারি’ নামকরণ করে।
নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরানো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানিÑ এ ধরনের কোনো বিশ্বাস ইসলাম সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতিপুজারি মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের স্থান নেই। বরং মুসলমানদের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখ-, হয় সে এ মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নয় তো আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠবে।
প্রকৃত অর্থে, সুনির্দিষ্ট কোনো দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার গভীর বাসনা থেকে অথবা আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ, কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করা ইত্যাদি থেকে জš§ নেয় বর্ষান্তরে উৎসব পালনের ঘটনা। আল্লাহপাক মানুষের এ স্বভাবজাত বাসনা সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত। তাই তিনি তা প্রকাশের মার্জিত ও সম্মানজনক পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সৃষ্টিসংলগ্ন সামগ্রিক প্রজ্ঞাময়তা, পৃথিবীবক্ষে মানবপ্রজšে§র দায়দায়িত্ব, আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের জিম্মাদারি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখেই তিনি দিয়েছেন উৎসব পালনে সম্মানজনক বিধান। এ প্রসঙ্গে রাসুল সা. বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটা আমাদের ঈদ।’
এছাড়া আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণিত, রাসুল সা. যখন মদিনায় এলেন, তখন তাদের দুটি উৎসবের দিন ছিল শুনে রাসুল সা. বললেন, ‘এ দুটি দিনের তাৎপর্য কী?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটি দিনে উৎসব করতাম।’ রাসুল সা. বললেন, ‘এ দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের উত্তম কিছু দিন দিয়েছেন, কুরবানির ঈদ ও রোজার ঈদ।’ সুনান আবু দাউদ
এ হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং উৎসবের জন্য নতুনভাবে দুটি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোজের দিন (নববর্ষের দিন) আলি রা. এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে। ফলে) আলি রা. বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম’। অর্থাৎ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানিফা, সয়মারি) তাই বলা যায়, মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। এক্ষেত্রে বছরের নতুন কোনো দিনে বরং আমরা সত্যপথে চলার লক্ষ্যে সুদৃঢ় শপথ নিতে পারি। যা আমাদের জন্য বয়ে আনবে মঙ্গল।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক


শেয়ার করুন