৯ বছর ঝুলে আছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ জটিলতা

7fde8d14-a771-4594-b8d3-681080635d97শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
দীর্ঘ ৯টি বছর ধরে ঝুলে আছে কক্সবাজারের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ জটিলতা। এই দীর্ঘ সময়েও বাদ পড়া শহীদদের নাম অন্তর্ভূক্তি করে স্মৃতিস্তম্ভ জটিলতা নিরসন না করায় এই নিয়ে মুক্তিপযুদ্ধপ্রেমী লোকজনের মাঝে ক্ষোভ বেড়ে চলছে। এটিকে তারা শহীদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তাদের অবমূল্যায়ন বলে মনে করছেন।
তারা বলছেন, গত বিএনপি জোট সরকারের আমলে তৈরি করা স্মৃতিস্তম্ভে শতাধিক শহীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলেও এই জটিলতার কোন সুরাহা হয়নি। এটিকে শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণে চরম স্বদিচ্ছার অভাব বলে মনে করা হচ্ছে। এই নিয়ে নানা আন্দোলন করা হলেও তা কাজে আসেনি।
কক্সবাজার জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি শংকর বড়–য়া রুমি জানান, স্বাধীনতার অনেক বছর কক্সবাজারের শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখন বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। ভুল এবং অনেক শহীদকে বাদ রেখেই স্তম্ভটি তৈরি করা হয়। তা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সংশোধন ও বাদ পড়াদের নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য হরতালসহ অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোন কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছরেও কক্সবাজারে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের ভুল সংশোধন করে সকল শহীদের নাম অর্ন্তভুক্ত না করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ব্যাপার। স্মৃতিস্তম্ভের নাম ফলকে বাদ পড়া শহীদদের নাম অন্তর্ভুক্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা জাতি হিসেবে আমাদের হীনমন্যতার পাশাপাশি সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছু নয়।’
জেলার বাদ পড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভূক্ত না করায় এখন পর্যন্ত এই স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান না কক্সবাজারের মানুষ। একারণে নির্মাণের ৯ বছর পরও এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে মাত্র ১০ জন শহীদের নাম অন্তর্ভূক্ত নির্মাণ হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ। অন্তর্ভূক্ত হওয়া ১০ জনই সিপাহী। কিন্তু দেশ জুড়ে আলোচিত শহীদদের নাম বাদ পড়ে যায়। এছাড়া অন্তর্ভূক্ত হওয়াদেরও ছিল তথ্যগত ভুল। ভুল সংশোধনসহ বাদ পড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবীতে কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। এমনকি ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল কক্সবাজার শহরে অর্ধদিবস হরতালও পালিত হয়। তারপরও সংশোধন হয়নি। তাই সেই থেকে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধারাসহ মুক্তিযুদ্ধপ্রেমীরা।
জেলা পরিষদ সূত্র জানিয়েছেন, সেই সময় মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ১০ জনের তালিকাই পাঠিয়েছিল। সে তালিকা অনুসারে স্মৃতিস্তম্ভে ১০ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তারা হলেন, নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে আবদুল হামিদ, গোলাম কাদের, গোলাম সাত্তার, ক্যাপ্টেন মকবুল আহমদ, সিদ্দিক আহমদ, হাবিলদার আবুল কালাম, ইজিহার মিয়া, সিপাহী লাল মোহাম্মদ, শামসুল আলম, এস এম জাহাঙ্গীর এর নাম রয়েছে।
কিস্তু ঠাঁই হয়নি ২৭ মার্চের কালো রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে প্রথম শহীদ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রুমখাঁ পালং গ্রামের মেধাবী ছাত্র জাফর আলমের নাম, বুদ্ধিজীবী শহীদ সাবের, জেলার প্রথম শহীদ মোহাম্মদ শরীফ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দরের অস্ত্র খালাসের প্রতিবাদকারী বাঙালি সৈনিক শহীদ সিপাহী আকতার হোসাইন, এনামুল হক, কক্সবাজার রণাঙ্গনের প্রথম কাতারের শহীদ আমির হামজা, আলোচিত শহীদ ছাত্রনেতা সুভাষ ও ফরহাদ, ইলিয়াছ মাস্টার, হাবিলদার রহিম বখশ, মেছের আহমদ, জোনাব আলী, ভট্ট মহাজন, সিপাহী আবুল হোসেন, মাস্টার শাহ আলম, মাস্টার আহমদ বশির, কবির আহমদ, অজিত পাল, নির্মল ধর, মোহাম্মদ আলী, পিয়ারী মহাজন, স্বপন ভট্টাচার্য, মনিন্দ্র নাথ দে, নুরুচ্ছফা চৌধুরী, জানেন্দ্র লাল চৌধুরী, সতীশ মহাজন দে, মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, অনিল কান্তি দাশ, শশাংক বড়–য়াসহ অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম। কালাম আজাদ রচিত ‘মুক্তিসংগ্রামে কক্সবাজার’ বই অনুসারে কক্সবাজারের আরো ১৪৬ জন শহীদ রয়েছে। কিন্তু সেই সময় বিষয়টি বাস্তবায়ন কারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হলেও তারা নির্মিত স্তম্ভে জায়গা সংকুলান না হওয়ার দোহাই দিয়েছিলেন। মূলত এটিই এখন পর্যন্ত জটিলতা।
মুক্তিযুদ্ধপ্রেমীদের দাবী, শহীদরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা দেশ জাতির অমূল্য সম্পদ। তাদের জন্য যতবড় স্তম্ভ দরকার তা তৈরিতে কিসের কার্পণ্য? তাই জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যৌথ কমিটি গঠন করে সঠিক অনুসন্ধান করে সব শহীদদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পুননির্মাণ করা হোক।
কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কোন ধরনের আলাপ না করেই এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি বির্তকিত তালিকায় নির্মিত হওয়ায় জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে অনেক আগেই। আমরা তা সংশোধনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, অতিদ্রুত সব শহীদের নাম অর্ন্তভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন