৫ সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় কক্সবাজারবাসী

imagesআবদুল আলীম নোবেল:
কক্সবাজার জেলার বেশ কিছু গরুত্বপূর্ণ সংকট নিরসনে সাধারণ মানুষের কাতার থেকে বার বার দাবী ওঠেছে। এতদাঞ্চলের মানুষের এটি প্রাণের দাবী এখন। রোহিঙ্গা বসতি, পাহাড় কাটা, যানজট, সাগরে জলদস্যুতা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, এসব সমস্যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত। এতে উদ্বিগ্ন জেলার মানুষ। দীর্ঘ দিনের প্রভাবিত সমস্যাই এক মাত্র খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সমধান মোটেও সম্ভবনয় বলছেন কক্সবাজারের মানুষ। কক্সবাজারের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব বেশি আন্তরিক। তবে মাত্র গুটি কয়েক সমস্যাকে এড়িয়ে চললে উন্নয়নের বাধার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
প্রথমঃ-৯০ দশকের পর থেকে জেলার সব চেয়ে আলোচিত ও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁিড়য়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও অবৈধ রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন।  তারা বসতি স্থাপন করে দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে। নানা সমস্যার পাশাপাশি পর্যটন শিল্প প্রসারেও প্রধান  সমস্যা হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা অসংখ্যা বার রোহিঙ্গা নিয়ে সংকটকাল অতিক্রম করতে কাজ করে গেলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সমস্যা সমাধানের  বারে বারে আশ্বাসের বানী শুনিয়ে যায় এ পর্যন্ত হয়নি কোন সঠিক সমাধান।
স্থানীয়দের অভিযোগ রোহিঙ্গাদের সাথে প্রশাসনের নমনিয়তার সুযোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে চলেছে তারা। স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাতের কথা বলে রোহিঙ্গারা এদেশে আসতে শুরু  করে। সেই থেকে থেমে নেই অনুপ্রবেশ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। তারা জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পাহাড়ে সমতলে স্থাপন করে চলেছে বসতবাড়ী। তারা শুধু এখানেই থেমে নেই, ঘটিয়ে চলেছে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। পাহাড় কাটা,চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই, অপহরণ,জলদস্যুতা,শ্রমবাজার দখল,খাস জমি দখল সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে ধ্বংস করছে কক্সবাজারের সামগ্রিক পরিবেশ। এমনকি তারা বাংলাদেশী পাসপোর্টে শ্রম ভিসায় বিদেশ গিয়ে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি শহরের পাহাড়তলী,দঃ রুমালিয়ার ছড়া,সাহিত্যিকা পল্ল্ী, লারপাড়া,কলাতলী,ঘোনাপাড়া, মিতিপাড়া,কুতুবদিয়াপাড়া,হালিমাপাড়া,ফাতেরঘোনা সহ বিশাল পাহাড়ী এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের বসতি।এছাড়াও টেকনাফ,উখিয়া,রামু,সদর,মহেশখালী,চকরিয়া,পেকুয়া উপজেলার পাহাড়ী এলাকা ও খাঁস জমি দখল করে বসতি স্থাপন করেছে।
দ্বিতীয়ঃ- সমস্যা পাহাড় কাটা। এই সমস্যা জেলাবাসীকে চরম সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। শহরের কলাতলী, আদর্শগ্রাম, লাইটহাউজ পাড়া ঘোনারপাড়া, বাসটার্মিনেল, লারপাড়া, বৈধ্যঘোনা, পাহাড়তলী,সাহিত্যিকা পল্লীসহ  পাহাড়ী এলাকায় নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা। শহরের বাসটার্মিনেল থেকে কলাতলী মোড় পর্যন্ত সড়কের দু পাশের এলাকাতেই ৪০/৫০ স্পটে পাহাড় কেটে বহুতল ভবণ নির্মানের কাজ অব্যাহত আছে। জেল গেইট এলাকার হাসান জানান, বিভিন্ন কোম্পানীর শত শত শ্রমিক পাহাড় কেটে চলছে,গড়ে উঠছে বহুতল ভবণ। প্রশাসনের সহায়তায় তারা নির্বিঘেœ এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত পাহাড় কাটার ফলে, জেলায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বহু বার। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে নিহতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পাহাড় কাটার ফলে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে ঝুকি। টেকনাফ উপজেলার সালাম জানান,হোয়াইক্যং,বাহার ছড়া ,উনসিপ্রাং,মৌলবীবাজার সহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় চলছে ব্যাপক পাহাড়কাটা।  এই সব এলাকায় প্রায় ৫হাজার পরিবার ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করে । উখিয়া উপজেলার সেলিম জানান,সোনাইছড়ি,হলদিয়া,ভালুকিয়া,হরিণমরা,ভুতেরবিল এলাকায় চলছে পাহাড় নিধন,বাড়ছে অবৈধ বসতি। মহেশখালী উপজেলার আনসার নামের এক আইনজীবি সহকারী জানান, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী, শাপলাপুর, ইউনুচখালী, ঝাপুয়া, কালারমারছড়া, কেরুনতলী সহ ইত্যাদি পাহাড়ী এলাকায় প্রায় ২০০ স্পটে পাহাড় কাটা চলছে। ফলে বাড়ছে ঝুকিপুর্ণ বসবাস ও তৈরী করা হ”্ছে পানের বরজ। এলাকার সব পাহাড়ই অবৈধ দখলে চলে গেছে।
তৃতীয়তঃ-যানজট সমস্যাঃ  কক্সবাজার শহরবাসীর কাছে যানযটের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। তা সমাধানে অচিরে কোন ব্যাবস্থা না নিলে এ সমস্যা আগামীতে চরম আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছে শহর পরিকল্পনাবিধরা। এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসন বিভিন্ন উদ্দ্যেগ নিলেও সমন্ময় ও পরিকল্পনা না থাকায় তা আলোর মুখ দেখেনি অনেক দিন থেকে। স্থানীয়রা জানান, যানজট নিরসনে প্রশাসন বার বার উদ্যেগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। শহরে থাকা বাস কাউন্টার গুলো বের করে দিয়েও এর কোন সুরাহা হয়নি,বরং আরো বেড়েছে সমস্যা। শহরের বার্মিজ মার্কেট থেকে লাল দীঘির পাড় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। শহরে  প্রায় ৩ হাজার অবৈধ টমটম, , সিটি সার্ভিস, অবৈধ রিক্সা ও সিএনজি’র সড়কের উপর পার্কিং, যাত্রী উঠানামা সহ অতিরিক্ত যানবহন চলাচল ও যখন তখন মালবাহী ট্রাক,ভ্যান  শহরে ঢ়ুকে পড়লে যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে। অন্যদিকে একই চিত্র চকরিয়া পৌরসভায়ও  বিরাজ করছে। তীব্র যানজটে দুর পাল্লার গাড়ী গুলো ওখানে ঘন্টার পর ঘন্টা  দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সচেতন মহলের মতে, সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে উদাসীন থাকায় যানজট সমস্যা জেলাবাসীর ঘাড়ে চেপে বসে আছে।
চতুর্থঃ- সাগরে জলদস্যুতাঃ বেশ কয়েক বছর থেকে  মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সাগরে জলদস্যুতা। প্রতিনিয়ত ঝুকির নিয়ে জেলার ৫০ হজারের অধিক জেলের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। শহরের ফিশারীঘাট এলাকার বহাদ্দার জসিম উদ্দিন জানান, সাগরে জলদস্যুতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝুকির মুখে জেলেদের জীবন, অনিশ্চয়তায় দিন কাটে জেলে পরিবার। জলদস্যু কতৃক প্রতিদিন ঘটে চলেছে জাল ও মাছ লুঠ, মাঝিমাল্লা অপহরণ,মুক্তিপণ দাবী। তাদের উদ্ধারে সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থা প্রয়োজনীয় সময়ে এগিয়ে আসেনা বলে অভিযোগ করেন অনেক জেলেরা। নিরূপায় হয়ে মুক্তিপণ দিয়েই তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হয় এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।
পঞ্চমঃ- জেলায় অপরিকল্পিত নগরায়ন অন্যতম একটি সমস্যা। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে ,কক্সবাজারকে পর্যটন রাজধানী ঘোষণা করলেও সেভাবে বিকশিত হচ্ছেনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবাসন বাণিজ্য ভূমি গ্রাসীদের অবৈধ দখল, সৈকতে অবৈধ স্থাপনা স্থ্পন,খাস জমির অব্যবস্থাপনা, সৈকত রক্ষণা বেক্ষণের অভাব,বাঁকখালী নদীর নব্যতা হারানো, নেই শহর রক্ষাবাঁধ ইত্যাদি কারণে থেমে আছে পরিকল্পিত নগরায়ন ,থেমে আছে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা। পর্যটন নগরীর উন্নয়নে অপরিকল্পিত নগরায়ন একটি বড় সমস্যা। জেলাবাসীর জানা নেই এই সব সমস্যার সমাধান কোন পথে। এই সমস্যা সমধানের এক মাত্র উপায় এখন খোদ প্রধানমন্ত্রী।


শেয়ার করুন