প্রথম দফায়

৪১ বীরাঙ্গনা পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

A woman emerges out of hiding for the first time, carrying a rifle and accompanied by her children. The family were hiding from Pakistani troops during the Bangladesh War of Independence.

A woman emerges out of hiding for the first time, carrying a rifle and accompanied by her children. The family were hiding from Pakistani troops during the Bangladesh War of Independence.

সিটিএন ডেস্ক :

অবশেষে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত বীর নারীদের স্বীকৃতি মিলছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। প্রথম দফায় ৪১ জন বীরাঙ্গনাকে এ স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি তাদের নাম, ঠিকানাসহ একটি তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসে পাঠানো হয়েছে।

আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে বিজি প্রেস (বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়) থেকে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে জানান, মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বার্থে বীরাঙ্গনারা অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। এ কারণে সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ অনুসারে প্রথম দফায় ৪১ জনকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামুকার কাছে আরো ১২১ জন বীরাঙ্গনার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চেয়ে করা আবেদন জমা রয়েছে। এসব আবেদন উপজেলা পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে শিগগিরই গেজেট প্রকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবেদনকারীদের বাইরে আরও অনেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে সামাজিক কারণে তারা আবেদন করছেন না।

এ তালিকায় বীরাঙ্গনাদের মধ্যে গেজেটে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহের ফতেহপুর গ্রামের ময়মনা খাতুন। এই জেলা থেকে আরো তিনজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। তারা হলেন— নাকাগাঁও (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের হালিমা খাতুন, খন্দকপাড়ার জাহেরা খাতুন ও বালিচান্দার ফাতেমা খাতুন।

তালিকা পর্যালোচনা দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের সর্বোচ্চ ১৩ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন। তারা হলেন—ফকিরপাড়া গ্রামের আয়মনা, চুলিয়াহাতির আছিয়া বেগম, রহমতগঞ্জের (নতুন ভাঙ্গাবাড়ি) সূর্য বেগম, বিন্দুপাড়া দত্তবাড়ির কমলা বেওয়া, তেঁতুলিয়া পশ্চিমপাড়ার জয়গন, পিটিআই স্কুলপাড়ার ছুরাইয়া খাতুন, সয়াধনগাড়া পূর্বপাড়ার মাহেলা বেওয়া, কান্দাপাড়ার ফকিরপাড়ার হামিদা বেওয়া, কান্দাপাড়ার হাসনা বেগম, চাঁদপুর ঝাউলের রাজুবালা দে, চককুবদাশপাড়ার রহিমা বেওয়া, সদরের ছামেনা খাতুন ও সয়াধনগাড়ার শামসুন্নাহার বেওয়া।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার স্বীকৃতি পাচ্ছেন ১০ জন। তারা হলেন— নরশিরা গ্রামের রাবিয়া বেগম, রেনু বেগম, রাহেলা বেগম, চৌকামনাকষার মালেকা বেগম, লক্ষ্মীনারায়ণপুরের হাসিনা বেগম, লালাপুরের জালো বেগম, বড় বঙ্গেশ্বরপুরের সফেদা বেগম, আয়েশা বেগম, সাহাপুরের হাজেরা বেগম ও আরবী বেগম।

এ ছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের ছয়জন, কুষ্টিয়ার চারজন এবং হবিগঞ্জ, সিলেট ও রংপুরের একজন করে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের ছয়জন হলেন— রাউতনগর গ্রামের সুমি বাসুগী, মনি কিসকু, হাফেজা বেওয়া, নিয়ানপুরের মালেকা, শিদলীর নিহারানী দাস ও পকম্বার নূরজাহান বেগম।

কুষ্টিয়ার চারজন হলেন— হাসিমপুর গ্রামের এলেজান বেগম, মটমালিয়াটের মোমেনা খাতুন, দোলাজান নেছা ও নাতুরিয়ার মজিরন নেছা। সিলেটের মনতৈল গ্রামের এশনু বেগম, হবিগঞ্জের বেলঘর গ্রামের মাজেদা বেগম ওরফে মাজেদা খাতুন ও রংপুরের কাছনা তকিয়ারপাড়ার মনছুরা বেগম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে বীরাঙ্গনাদের যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য শুধু মহিলা কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠনের পাশাপাশি পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাব কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন— সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি ও জামুকার সদস্য মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান (বীরপ্রতীক)।

এই সাব কমিটি উপজেলা পর্যায় থেকে প্রশ্নমালার আলোকে বীরাঙ্গনাদের আবেদন যাচাই-বাছাই-সংক্রান্ত কমিটির পাঠানো প্রতিবেদন পাওয়ার পর জামুকার সভায় তা বিবেচনার জন্য দাখিল করবে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায় থেকে কমিটি কোনো বীরাঙ্গনার আবেদনের পক্ষে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিলে এবং ঠিকানা ভুল থাকার কারণে কারো সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে না পারলে তাদের শনাক্ত করে ঢাকায় জামুকার প্রধান কার্যালয়ে এনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় দৈনিক সমকালে মুক্তিযুদ্ধে ১২৬ জন বীরাঙ্গনার অবদান ও দুঃখ দুর্দশা নিয়ে ১২ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি বেসরকারি একটি সংগঠন হাইকোর্টে রিটও দায়ের করে।

একই বছরের ২৭ জানুয়ারি ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি দিতে জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর প্রথম দফায় ৪১ জনকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।


শেয়ার করুন