৪০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দিচ্ছেন মমতা

113843_1সিটিএন  ডেস্ক

নবান্ন উপলক্ষে ৪০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দেবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

তবে সাইকেল বিলি শুরু হওয়ার আগেই তাই নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। ভোটের মুখে সরকারি টাকায় খয়রাতির এই পরিকল্পনায় বিস্তর পানি মেশানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

মুখ্যমন্ত্রীর এই সাইকেল প্রকল্পের খরচ নিয়েও চিন্তিত নবান্নের কর্তারা। সরকারের হিসেব অনুযায়ী ৪০ লক্ষ সাইকেল কিনতে খরচ হবে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। কিন্তু কয় মাসের মধ্যে এত বাড়তি টাকা আসবে কোথা থেকে?

নবান্নের খবর, এই প্রকল্পের জন্য শিক্ষা, সুন্দরবন, সংখ্যালঘু তফসিলি জাতি-উপজাতি উন্নয়ন এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তর থেকে টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু তাতে কুলোবে না বলে টাকা মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের অন্য কিছু দপ্তরকেও।

বাজেট হওয়ার পরেও দপ্তরগুলো কী ভাবে টাকা দেবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে অনেকেই।

প্রশাসনের শীর্ষ মহলের এক কর্মকর্তার বলেন, ‘আগামী বছরই ভোট। এখন যা কিছু হবে, সব কিছুরই লক্ষ হবে ভোটার বাড়ানো। সাইকেল কেনার ঘোষণা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সুতরাং টাকা জোগাবে সরকার। এখানে কোন দফতর টাকা দেবে, তা বাজেটে ধরা আছে কি না এ সব প্রশ্ন অবান্তর!’

তার ধারণা, এমন আরো অনেক ঘোষণা হবে, যার প্রতিটি ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু টাকা ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে।

গত মে মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় ইন্দিরা ময়দানে সুন্দরবন গোল্ড কাপ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা ৪০ লক্ষ সাইকেল তৈরি করব। সরকারি বিদ্যালয়ের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ও সরকারি মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের তা বিতরণ করা হবে।’

মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা বলে কথা। তাই তা রূপায়ণে কোমর বেধে নেমে পড়েছেন নবান্নের কর্তারা।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে তফসিলি জাতি ও উপজাতি উন্নয়ন নিগম সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যেমে দরপত্র আহ্বান করে। শর্ত দেওয়া হয়, শেষ তিন বছর সাইকেল তৈরির ব্যবসায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন থাকতে হবে। আর আবেদনপত্রের সঙ্গে নমুনা হিসাবে কয়েক ধরনের সাইকেল জমা দিতে হবে।

প্রথম পর্যায়ে ছাত্রদের জন্য ১০ লক্ষ ও ছাত্রীদের জন্য ১০ লক্ষ সাইকেল বরাদ্দ দেয়া হয়। দেখা যায়, শর্ত পূরণ করতে না পারায় পশ্চিমবঙ্গের কোনো সাইকেল তৈরির সংস্থা দরপত্রে অংশই নিতে পারেনি। ফলে পঞ্জাবের লুধিয়ানার তিনটি কোম্পানি দরপত্রে একই দর দিয়ে বরাদ্দ পেয়ে যায়।

অর্থ দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সাইকেলের দাম ঠিক হয়েছে ছাত্রদের জন্য ৩২০০ ও ছাত্রীদের জন্য ৩১৯৫ টাকা। প্রথম পর্বে ২০ লক্ষ সাইকেল কেনা হবে। মাস খানেক পরে আরো ২০ লক্ষ সাইকেলের দরপত্র চাওয়া হবে।

প্রশ্ন হল, রাজ্যে সাধারণ স্কুল ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ওই চার শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত?

শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা জানতে স্কুলশিক্ষা দপ্তর, উচ্চশিক্ষা দপ্তর ও মাদ্রাসা পর্ষদের কাছ থেকে একটি হিসেব নেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারি ও সরকারি সহায়তায় চলা স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণিতে এখন প্রায় ২০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে রয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ। পাশাপাশি, হাই মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসা নিয়ে আরো দেড় লক্ষ ছেয়েমেয়ে রয়েছে।

সব মিলিয়েও সংখ্যাটা কোনো মতেই ৩৬ লক্ষ অতিক্রম করছে না। বাকি ৪ লক্ষ সাইকেল কোথায় যাবে?

সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রী মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন’। রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং মাদ্রাসায় কত ছাত্রছাত্রী পড়ে, দপ্তরের কাছে তার হিসেব চেয়েছি। সেই মতো তালিকা প্রস্তুত করা হবে।’

সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দপ্তরের বাজেট থেকেই অর্থ দেওয়া হচ্ছে।’

অর্থ দপ্তরের এক কর্মকর্তার দাবি, এরপর সরকার সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছেলেমেয়েদেরও সাইকেল দেওয়ার কথা ভাবছে।

সূত্র: আনন্দবজার পত্রিকা


শেয়ার করুন