২৯ জুলাই বিয়ে, ফিরবেন কি হোসনা?

বড় ভাইয়ের সঙ্গে হোসনা। ছবি: লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেওয়া।

বড় ভাইয়ের সঙ্গে হোসনা। ছবি: লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেওয়া।

‘ওর বিয়ের কার্ড বিতরণ করা হচ্ছিল। আমার কাছেও একটি কার্ড আছে। বিয়ের সব কেনাকাটাও প্রায় শেষ। এখানে মোমুন সেন্টারে বিয়ের জন্য হল বুকিং দেওয়া হয়েছে। ২৯ জুলাই বিয়ে।’

ভেঙে পড়া কণ্ঠে প্রথম আলোর কাছে কথাগুলো বলছিলেন লন্ডনপ্রবাসী আজিজুল হক। ২৯ জুলাই তাঁর খালাতো বোন হোসনার বিয়ে। সে উপলক্ষ্যে সব আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু পুরো পরিবারটি এখন বিপর্যয়ের শিকার। লন্ডনে যে বহুতল ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে থাকেন হোসনার পরিবার। আগুন লাগার পর থেকেই পুরো পরিবার নিখোঁজ। কিন্তু তাঁরা কি জীবিত আছেন? এমন সব ভাবনায় অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপছে আজিজুল হকের।
হোসনা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাঁদের বাড়ি মৌলভীবাজারে।

মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে হোসনা। ছবি: লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেওয়া।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনে ২৪ তলা এক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে ৬০০ থেকে ৮০০ লোকের আবাস গ্রেনফেল টাওয়ার নামের ওই আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। অন্তত ৭৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। লন্ডন ফায়ার সার্ভিস অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ অগ্নিকাণ্ডকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছে। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনে ফোন করে আজিজুল হকের সঙ্গে কথা হয়। প্রথম আলোকে তিনি জানান, আগুন লাগার পর থেকে তিনি প্রায় সারাক্ষণই সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁর বাড়ি ওই ভবনের কাছাকাছি। পুলিশের কাছ থেকে ক্ষণে ক্ষণে তথ্য নিচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আশার বার্তা পাননি। বাড়িটির ১৭ তলার ১৪৪ নম্বর ফ্ল্যাটে খালা রাজিয়া বেগম (৬৫), তাঁর স্বামী কমরু মিয়া (৮২) এবং তিন সন্তান আবদুল হানিফ (২৯), আবদুল হামিদ (২৬) ও হোসনা বেগমকে (২২) নিয়ে বাস করতেন।

আজিজুল হক বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে ওদের (খালার পরিবার) সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। ওরা কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। বাসার বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর আর ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কেউ ফোন ধরেনি।’

আজিজুল হক জানান, হোসনা লন্ডনে স্কুল পাস করে কাজ শুরু করেছিলেন।

লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধুরী এবং একসময়ে দেশে সাংবাদিকতা করতেন, এখন লন্ডনপ্রবাসী আবদুল মান্নান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এই পরিবারটির খোঁজ পেতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। তাঁরা জানান, কমরু মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার একাটুনার ইউনিয়নের বিরইমাবাদ গ্রামে।


শেয়ার করুন