২৬ মার্চের প্রথম প্রহর কেমন ছিল?

01-50সিটিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে ৪৫ তম স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। তবে মূলত ২৫ শে মার্চ রাতেই অপারেশন সার্চলাইট নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সামরিক অভিযান শুরু করেছিল পাকিস্তানি সমরিক বাহিনী। আর ঐ গণহত্যার পরপরই শুরু হয় সর্বাত্মক প্রতিরোধ। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাতের গণহত্যার পর অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে দিনের বেলা কেমন ছিল ঢাকা শহরের অবস্থা, রাতে কি ঘটেছে সেটি কিভাবে জানতে পিরেছিল মানুষ?
২৫ শে মার্চের কালো রাত্রের গণহত্যার বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ২৬ শে মার্চের দিনটি হঠাৎ করে উদয় হয়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনাবলি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হতে হতে ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে উপনিত হয়েছি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ রায় দিয়েছিল বাঙ্গালির স্বায়ত্ব শাসন দিতে হবে এবং তার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এমন কি সেই সময় আত্মনিয়ন্ত্ররের দাবি সেটাও সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। সেই ভোটের রায় যখন পাকিস্তান সরকার বাতিল করে দিল সেই পরিপ্রেক্ষিতেই গণ ভোটের রায় বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যেই আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়া অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। একটা আলাপ আলোচনা চলছিল মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে এবং একটা পর্যায়ে আমরা বুঝতে পারছিলাম ষড়যন্ত চলছে।
২৬ শে মার্চের ঐ দিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ২৫ তারিখ বিকেলেই আমরা বুঝতে পারছিলাম একটা অঘটন ঘটতে চাচ্ছে। আমরা শহীদ মিনারে সব মানুষকে জমায়েত করে ব্রিফিং করতাম আগামী দিন কি করতে হবে। আমরা পরের দিনের বিকেলের সমাবেশ সকালে নিয়ে আসি এবং বলি আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন, চোখ-কান খোলা রাখবেন। আমরা ঢাকা শহরে আত্মরক্ষার জন্য একটা পরিকল্পনা করি। মধ্য রাতের আগে আগে পাক হানাদার বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে নেমে পড়ে তখন আমরা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করার উদ্যোগ নেই। আমি সেই সময় ককটেল কিভাবে বানানো যায় তার জন্য কেরোসিন ও প্রচুর বোতল যোগাড় করে প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু মধ্য রাতের পরেই আমরা দেখতে পাই পাক সেনাবাহিনী তার সমস্ত আধুনিক অস্ত্র নিয়ে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চারিদিকে বুলেটের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রেল লাইনের পাশের বস্তিগুলোতে আগুন জ্বলছে। মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। আমি হাতিরপুলের একটি বাসা থেকে সবকিছু অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, আমাদের কাছে তাৎক্ষণিক দিক নির্দেশনা ছিল ঢাকা শহরে পাক বাহিনীর প্রবেশ আটকানোর জন্য বেরিগেট গঠন করব। শুনলে হাসি পেতে পারে আমরা বাড়ির ছাদের ওপর থেকে গরম তেল এবং মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে পাক বাহিনীকে হয়তো আটকাতে পারব। কিন্তু আমরা অল্প পরেই বুঝতে পারলাম এই আধুনিক বাহিনীর সঙ্গে এগুলো করে কিছু হবে না। এই বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করতে হলে আরও ভাল প্রস্তুতি দরকার। পরদিনই সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। সুতরাং ২৬ শে মার্চ আমরা রাস্তায় বের হতে না পারলেও আমরা ট্যাঙ্কেও চলাচল শুনতে পারছিলাম। আমার বাসায় একটা বাংলাদেশি পতাকা টাঙ্গানো ছিল সেই পতাকা লক্ষ করে ট্যাংক থেকে কামানের গোলা ছোড়া হয়েছিল।
কিভাবে টের পেলেন বড় ধরনের অভিযানে বহু মানুষ নিহত হয়েছে সে সম্পর্কে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা ভোর হওয়ার আগেই টের পেলাম কেননা বস্তিগুলো আগুনে জ্বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিছু কিছু খবর আমাদের কাছে আসল পুলিশ লাইনে যুদ্ধ চলছে। ২৭ শে মার্চ সকালে যখন অল্প সময়ের জন্য কারফিউ তোলা হল তখন আমরা ঢাকার বিভিন্ন রাজপথে বের হয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক, মহসীন হল, অন্যান্য এলাকা ঘুরে অসংখ্য লাশ আমরা সেখানে দেখতে পাই। সেই সময়ে মনে হয়েছে দেশে গণহত্যা শুরু হয়ে গেছে।
বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া


শেয়ার করুন