হয়তো এটাই শেষ দেখা, সবার দোয়া চাইলেন বেসবাবা সুমন

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত হলো জয় বাংলা কনসার্ট। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের মাহাত্ম্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

শনিবার (৭ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে গানের এই উৎসব। এবারে কনসার্ট মাতিয়েছেন মিনার ও অ্যাভয়েড রাফার একক পরিবেশনার সঙ্গে জনপ্রিয় ৯টি ব্যান্ডদল। লাইন আপে নাম না থাকার পরও এবারের জয় বাংলা কনসার্টের মঞ্চে দেখা গেছে জনপ্রিয় রকব্যান্ড ‘অর্থহীন’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং দলনেতা সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমনকে, যিনি ভক্তদের কাছে ‘বেসবাবা সুমন’ নামে পরিচিত।

রাত ১১টার বেশ কিছু সময় পর মঞ্চে ওঠেন ব্যান্ডদল ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ড। সে সময় দলটির দলনেতা ফুয়াদ মঞ্চে ডেকে নেন ক্যান্সারে আক্রান্ত বেসবাবা সুমনকে। আমন্ত্রণে লাঠিতে ভর দিয়ে মঞ্চে উঠে সুমন।

তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত হাজারও শ্রোতা-দর্শক। সুমন মঞ্চে উঠে বলেন, ‘সবাই ভালো? আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। লোয়াল স্পাইনে একটা সমস্যা আছে। যেটার অপারেশন করতে অনেকেই রাজি হয়নি। তারা বলেছে, আমার কোমর থেকে পা পর্যন্ত প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার ৭০ ভাগ আশঙ্কা আছে। অবশেষে আগামী ১৮ তারিখ আমি অপারেশনটা করতে জার্মান যাচ্ছি। যদি সুস্থ হয়ে ফিরি আবার নিয়মিত স্টেজে দেখা হবে।’

এরপর মঞ্চে ‘মুখটা তুলে আকাশটাতে দেখ আরেকবার’ ও ‘গাইবো না আর কোনো গান তোমায় ছাড়া’ গান পরিবেশন করেন বেসবাবা সুমন।

এরপর তিনি ফুয়াদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘১৮ তারিখের আগে আমার অর্থহীনের হয়ে স্টেজে ওঠা সম্ভাব ছিল না। কিন্তু ফুয়াদ যখন আমাকে বললো আমি দুই একটা গান করতে পারবো কি-না, বললাম অবশ্যই। কারণ আমার শেষ স্টেজে ওঠা হয়তো এটাই। যদি আর উঠতে না পারি। সবাইকে ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে ‘ফ্রিকোয়েন্সি’ ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে সুমন তার রক সংগীতের জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সের মধ্যে অনেকগুলো ব্যান্ডে বেস বাজানোর সৌভাগ্য হয় তার। ১৯৯৭ সালে তিনি সেই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ওয়ারফেজ’-এ গিটারবাদক হিসেবে যোগ দেন। দুই বছর ওয়ারফেজে বাজানোর পর, ১৯৯৯ সালে নিজের প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুমন ও অর্থহীন’ প্রকাশ করেন তিনি। অ্যালবামটি অনেক জনপ্রিয়তা পেলে, সে বছর অর্থহীন ব্যান্ডের যাত্রা শুরু করেন সুমন।

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই বেইজ গিটারিস্ট নিজের প্রকৃত নামের চেয়ে সংগীত জগতে বেসবাবা সুমন নামে বহুল পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে লড়াই করছেন তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে। তবু গানকে জড়িয়ে আছেন ভালোবাসায়।

এলএ/এমএসএইচ


শেয়ার করুন