হোয়াইক্যং আলী-আছিয়া হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবী

টেকনাফের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে অন্যান্য পরীক্ষা কেন্দ্রের আদলে পুনরায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন অভিভাবক, সচেতন মহল এবং শিক্ষার্থীরা। এটি পুনরায় স্থাপন করা হলে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া দরিদ্র সমাজের অভিভাবক। সচেতন মহলের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দীর্ঘ দিনের দাবি হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পুনরায় পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করার।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সনে ওই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়ে পিছনে ফিরতে হয়নি। বিন্দু বিন্দু করে এগিয়ে উপজেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠানের দাবি রাখে। বর্তমানে শিক্ষা-দীক্ষা ও সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীতে উপজেলার অন্যতম বিদ্যালয় হিসেবে প্রশংসিত। বিদ্যালয়ে সুদক্ষ শিক্ষক মন্ডলীর পরিচর্যায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। প্রতিবছর জেএসসি ও এসএসসিতে ভাল ফলাফল অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিদ্যালয়টি সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ভৌগলিক অবস্থান ও অবকাঠামেগত বিশেষ করে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারী, ভালো পরিবেশসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০০১ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড এ বিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। তখন থেকে ওই বিদ্যালয়ে জুনিয়র বৃত্তি, এসএসসি এবং এইচএসসি সুচারূরুপে পরিচালিত হয়। কিন্তু ৩টি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় লেখাপড়ার বিঘœ সৃষ্টির কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বোর্ড বরাবর কেন্দ্র সমর্পণের কারণে ২০০৮ সাল হতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নতুন ৩টি বিদ্যালয় অনুমতি পাওয়ায় পুনরায় ওই বিদ্যালয়ে কেন্দ্রের চাহিদা ও উপযোগিতা জনমনে বিশেষ করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আকারে ধারণ করে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যাললয়ের চারিদিকে বাউন্ডারী, দ্বিতল ভবনের পাশাপাশি আলাদা অফিস রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত পরিবেশে ক্লাস নিচ্ছে। পাশে রয়েছে দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। পার্শ্বে পুলিশ ফাঁড়ী থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনিতে রয়েছে বিদ্যালয়টি। হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাও. নুর আহমদ আনোয়ারী ওই বিদ্যালয়ে কেন্দ্র স্থাপনের যথার্থ গুরুত্ব রয়েছে বলে দাবী করেন।
জানা যায়, হোয়াইক্যং, শামলাপুর হ্নীলার মত ৩টি বৃহৎ ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী টেকনাফ উপজেলা সদরে নানা দূর্ভোগ ও অন্তহীন সমস্যার মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। তাছাড়া বর্তমানে কাঞ্জরপাড়া, নাইক্ষ্যংখালী এবং লেদা আরও ৩টি নতুন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যোগ হবে। ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অতিক্রম করে বিশালায়তনের এই উপজেলায় শুধুমাত্র সদরে পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ গরীব পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি দুরবর্তী স্থান টেকনাফ সদরে যাতায়ত ও একত্রে বিপুল সংখ্যক পরিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা নিয়ে নাজুক অবস্থাসহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে যে সংখ্যক হোটেল রয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আসন সংখ্যা সীমিত। যাতায়তের দৈন্যদশার কারণে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে অনেক পরীক্ষার্থী যথা সময়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিল। নাইট্যংয়ের খাড়া পাহাড়ী সড়কে পণ্য ও লবণ বোঝাই ট্রাক উঠতে না পেরে মাঝ পথে আটকে সড়ক যোগাযোগ প্রায়শঃ বিচ্ছিন্ন হওয়া সড়কটির নিয়মিত ঘটনা। সব মিলিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র অতীব জরুরী বলে জানিয়েছেন কাঞ্জরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিক উদ্দিন। তিনি আরও জানান ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৭টি বিদ্যালয় হওয়ায় হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পুনঃ স্থাপন অনেক গুরুত্ব বহন করে।
স্থানীয় এলাকার পরিক্ষার্থীরা বলেন, দশটি বছরের সাধনা হচ্ছে নিরাপদে ও ঝামেলামুক্তভাবে মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষা দেয়া। কিন্ত পরিক্ষা কেন্দ্র দুরে হওয়ায় নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে যথাসময়ে অংশগ্রহণ করতে না পারার ভয় কাজ করছে। তুলনামুলক নিকটস্থ আলহাজ¦ আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্বের মত কেন্দ্র হলে এ ভয়টি থাকতোনা। তাদের দাবী পরীক্ষার্থীর বৃহৎ স্বার্থ চিন্তা করে হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হউক। হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দু সালাম বলেন, টেকনাফ সদরের পরিবেশ ও অনুন্নত যোগাযোগের কারণে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ খুবই দূরূহ ব্যাপার। হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে রিক্সাযোগেও অংশগ্রণ করা যাবে। পাশ্ববর্তী ওইসব বিদ্যালয়ের অধিংকাশ অভিভাবকেরও একই দাবী। হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল চৌধুরী মুসা বলেন, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের বৃহৎ স্বার্থ বিশেষতঃ গরীব পরিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রটির পুনর্বহাল অতীব জরুরী। পরীক্ষা কেন্দ্র পুনরায় স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সকলের আশু দৃষ্টি কামনা করেন। টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার বলেন ভৌগলিক অবস্থান ও সার্বিক দিক বিবেচনায় হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসির কেন্দ্র পুনঃ স্থাপনের গুরুত্ব যথার্থতা রয়েছে।


শেয়ার করুন