হাসিনা-খালেদাকে দুষছেন সুশীল সমাজ

হাসিনা-খালেদাকে দুষছেন সুশীল সমাজ

দ্য রিপোর্ট : অনাকাঙ্ক্ষিত আর অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ২০১৫ সাল শুরু হয়েছে। পাঁচ জানুয়ারিকে ঘিরে বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজনীতিবোদ্ধা, সুশীল সমাজ আর সাধারণরা বলছেন, এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া।

একমাত্র তারাই পারেন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে।

সুশীল সমাজের কেউ কেউ মনে করছেন দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই দেশের এই পরিস্থিতি। কারও কারও মতে, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এই দুই বর্ষীয়ান নেত্রীই পারেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বদলীয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ বাতলে দিতে। তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করে উদ্যোগ নিলেই দেশে মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা চলতে পারে। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির বদলে বাংলাদেশ পেতে পারে গঠনমূলক দেশ গড়ার রাজনীতি।

বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যা ঘটছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত, অস্বাভাবিক ঘটনা। বড় দুটি রাজনৈতিক দল তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। আর এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া এ দু’জন প্রভাবশালী নেত্রী তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশের চর্চা করছেন। এই দুই নেত্রী যদি ব্যক্তিগত আক্রোশ ভুলে গিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করেন তবে নিমিষেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। এ জন্য দুই নেত্রীকেই ছাড় দিতে হবে। নিরপেক্ষ, সর্বদলীয়, অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়াকেই বের করতে হবে। তাদের দু’জনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারে থাকায় এগিয়ে আসার দায়িত্ব তার ওপরই বর্তায়।’

পাঁচ জানুয়ারির সমাবেশ সম্পর্কে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে সরকার। এটা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। অন্যদিকে, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সময়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এতে করে সরকার সমাবেশ করতে না দেওয়ার উপাদান খুঁজে পায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, এই নির্বাচন হবে নিয়ম রক্ষার এবং সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নির্বাচন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী নতুন করে নির্বাচনের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অন্যদিকে, গত এক বছরে বিএনপি গঠনমূলক আন্দোলন করতে পারেনি। নিরপেক্ষ, সর্বদলীয়, অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলনের জন্য জনমত গঠন করতে পারেনি। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া যা বলেন, তাই হয়। এ জন্য এই দুই নেত্রী কখনই সাধারণের কথা ভাবেন না।’

অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার পথ সম্পর্কে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমাধানের চাবিকাঠি প্রধান দুই নেত্রীর হাতে। ব্যক্তিগত আক্রোশ বাদ দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুই নেত্রীকেই পথ বের করতে হবে। এই দু’জনকে এক টেবিলে বসতে হবে। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, তিনি সরকারে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলেই যে আলোচনা সফল হবে তা নয়। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াকেও পরিবেশ প্রস্তুত করতে হবে। এর আগে, ২০১৩ সালে একবার প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী তাতে প্রত্যাশার সাড়া দেননি। তাই সমাধানের পথে যেতে হলে দু’জনকেই দায়িত্বশীল এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বেরিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গণতন্ত্রের কাঠামোতে পরিবারতন্ত্রের চর্চা করলে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলতেই থাকবে। স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবদলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যতদিন পর্যন্ত সবদলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হবে ততদিন পর্যন্ত গণতন্ত্র আসবে না, স্থিতিশীলতা আসবে না। আগে হোক আর পরে হোক সবদলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। এ জন্য প্রধান দুই নেতাকেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে।’

অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, পাঁচ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতা প্রদর্শনের অবস্থান নিয়েছে। এটা দেখে যারা মনে করেন যে, এইবার এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে পারবে, আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। তবে চলতি বছরে এই ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা আরও শক্তিশালী আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও জানান, ক্ষমতা প্রদর্শনের এই বৃত্ত চক্র থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে না পারলে জনজীবনে কখনই স্থিতিশীলতা আসবে না। এই বৃত্ত চক্র ভাঙতে হলে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের এগিয়ে আসতে হবে। তা যে প্রক্রিয়ার মধ্যেই হোক না কেন। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তা না হলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে গিয়ে ঠেকবে, যা সামাল দিতে পারা সহজ হবে না।


শেয়ার করুন