হারিয়ে যাওয়া নায়িকারা

1_109027-thumbnailষাট থেকে নব্বই দশকের দাপুটে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাবানা, অঞ্জু এবং রোজিনা দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বহু আগে। আর অলিভিয়া দেশে থাকলেও অভিনয়ে নেই।

শাবানা যুক্তরাষ্ট্রে

ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন শাবানা। ৬০ থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়তায় কাজ করেছেন তিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের হাত ধরে চিত্র জগতে অভিষেক শাবানার। চলচ্চিত্রকার এহতেশাম ১৯৬৭ সালে রত্না পাল্টে শাবানা নামে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করালেন তাকে। চলচ্চিত্রটি সুপারহিট হলে শুরু হয় রুপালি পর্দায় নায়িকা শাবানার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন তিনি। ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্রসহ বাচসাস এবং অন্যান্য সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালে অভিনয় ছেড়ে সপরিবারে স্বেচ্ছায় ঠাঁই নিলেন আমেরিকায়। শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’। দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী শাবানা। দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোনো ইচ্ছা তার নেই।

আড়ালে অলিভিয়া

সত্তরের দশকে চলচ্চিত্রে আসা জনপ্রিয় নায়িকা অলিভিয়া দীর্ঘদিন ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘দুশমনি’। এরপর থেকে এই অভিনেত্রী পর্দা কিংবা বাস্তবে আর কারও মুখোমুখি হননি। অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই কাটছে তার জীবন। প্রথম স্বামী চিত্রপরিচালক এস এম শফির মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র ত্যাগ করেন অলিভিয়া। এরপর বিয়ে করেন ফতুল্লার মুনলাইট টেক্সটাইল মিলের কর্ণধার হাসানকে। বসবাস করছেন বনানীর ডিওএসএইচ-এর বাড়িতে। ১৯৭২ সালে চিত্রনির্মাতা এস এম শফি তার ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ ছবিতে প্রথম ব্রেক দেন অলিভিয়াকে। প্রায় ৫৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই জননন্দিত অভিনেত্রী। ববিতার পর অলিভিয়া ছিলেন একমাত্র নায়িকা যিনি তখন কলকাতার ছবিতে অভিনয় করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ছবির নাম ‘বহ্নিশিখা’। এ ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার।

জয়শ্রী কবির যুক্তরাজ্যে

জয়শ্রী রায় এমন একজন বাঙালি অভিনেত্রী যিনি চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়ের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন। ১৯৭০ সালে অভিনয় করেন সত্যজিতের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে। ১৯৬৮ সালে তিনি মিস ক্যালকাটা উপাধি লাভ করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী আসেন ১৯৭৫ সালে। ওই বছর ‘সূর্য কন্যা’ নামের ঢাকার ছবিতে অভিনয় করেন। ছবির পরিচালক আলমগীর কবিরকে বিয়ে করে এদেশে থেকে যান। প্রায় একযুগের মতো তিনি এদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আশির দশকের মধ্যভাগে আলমগীর কবিরের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি কলকাতাতে পাড়ি জমান। আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি মারা গেলে একমাত্র সন্তান লেনিন সৌরভ কবিরকে নিয়ে জয়শ্রী চলে যান লন্ডনে। লন্ডনের সিটি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন।

রোজিনা যুক্তরাজ্যে

অভিনেত্রী রোজিনার প্রকৃত নাম রওশন আরা রেনু। তার জন্ম রাজবাড়ীতে। ছাত্রী অবস্থাতেই ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সত্তরের দশকে প্রথমে একটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। ১৯৭৬ সালে কালিদাসের ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ঘটে তার। টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। অর্জন করেছেন দুবার জাতীয় পুরস্কারসহ বেশ কবার বাচসাস, প্রযোজক সমিতি ও পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড। আশির দশকে প্রযোজক ফজলুর রশিদ ঢালির সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর নব্বই দশকের শুরুতে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ১৯৯৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু তার।

অঞ্জু ঘোষ কলকাতায়

চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী ১৯৮২ সালে অঞ্জু ঘোষকে চলচ্চিত্রে আনেন। প্রথম ছবি ‘সওদাগর’ হিট হওয়ার পর এফ কবির চৌধুরী অঞ্জুকে অভিনয় করালেন নরম গরম, আবেহায়াত, পদ্মাবতী ইত্যাদি চলচ্চিত্রে। এরপর অভিনয় করেন বড় ভালো লোক ছিল, আশীর্বাদ, রাই বিনোদিনী, আয়না বিবির পালা, আশা নিরাশা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রক্তের বন্দী, পদ্মগোখরা ইত্যাদি নানা গল্প ও চরিত্রের সফল চলচ্চিত্রে। ১৯৮৯ সালে এলো অঞ্জুর বড় মাপের সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণ। মুক্তি পেল ‘বেদের মেয়ে জোছনা’। ঢালিউডের ইতিহাসে এর ব্যবসায়িক রেকর্ড এখনো কোনো চলচ্চিত্র অতিক্রম করতে পারেনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, তাকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে ‘নেশা’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন নির্মাতা ও স্থানীয় মাস্তানদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে অঞ্জুর ওপর। তারা তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করলে ১৯৯৬ সালে বাধ্য হয়ে সপরিবারে কলকাতা চলে যান অঞ্জু ঘোষ। বর্তমানে কোলকাতায় মাঝে মধ্যে যাত্রাপালায় অভিনয় করেন। তবে তার জীবন কাটছে নিঃসঙ্গ- একাকী।


শেয়ার করুন