হারিয়ে গেলেন খোকা

khoka-3-400x400সিটিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশের অন্যতম রাজনীতিবিদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা যেন হারিয়ে গেলেন রাজনীতি থেকে। কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত সাদেক হোসেন খোকা ২০১৪ সালের ২৪ মে থেকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
বিএনপির আন্দোলনের সময় মান্নার সঙ্গে খোকার টেলিকথন নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রাষ্ট্রদোহ মামলা। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অনেক হুলিয়া জারি আছে। বিভিন্ন সময় সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ ৫মে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ১৩৮টি দোকান বরাদ্দের অভিযোগে খোকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাগুলোর বিচার চলছে।
২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর সাদেক হোসেন খোকাকে ১৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছে নিম্ন আদালত। এ রায়কে প্রহসনমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেছেন, রাজনীতি থেকে তাকে বিদায় করতেই সরকারের চাপে আদালত এ রায় প্রদান করেছে। এই রায়কে তিনি বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রহসনের বিচার বলে অভিহিত করেন। নিউইয়র্কে চিকিৎসারত সাদেক হোসেন খোকা টেলিফোনে গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ একটি জটিল ও ক্রান্তিকালময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, সরকার মানুষের ইচ্ছার কোনো মূল্য দিচ্ছে না। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। মানুষের ভোটাধিকার নেই, জীবনের মূল্য নেই। সরকার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এ থেকে বেরিয়ে আসা সময়ের দাবি। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বিএনপির আন্দোলন দুর্বল। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে একটু সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিজ বাসভবনে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন সাদেক হোসেন খোকা। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে সাদেক হোসেন বলেন, নির্বাচনকালে এমন একটা কর্তৃপক্ষ থাকবে যার অধীনে প্রতিদ্বন্দ্বী সবাই সমান সুযোগ পাবে। এ ধরনের নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সরকারই হোক তার প্রয়োজনীয়তা আছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় সেটা বিগত সংসদ, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের বাড়াবাড়ি বন্ধে আইন-কানুন থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সাদেক হোসেন খোকার মতে, দেশ ভবিষ্যতে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগ সবাই দায়ী। পার্লামেন্টে ব্যবসায়ী বা গজিয়ে ওঠা রাজনীতিবিদদের নিয়ে দলগুলোর মাতামাতি রাজনীতিকে রাজনীতিহীন করে তুলছে। এর মাশুল দিতে হবে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে।
৫ই জানুয়ারির একতরফা সংসদ নির্বাচনের সময় সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির আরো অনেক শীর্ষ নেতা ছিলেন কারাগারে। গত বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারি খোকা কারাগার থেকে ছাড়া পান। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সাংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি চান সাদেক হোসেন খোকা। নয়া পল্টনে দলের মহানগর কার্যালয়ে তিনি এ কথা জানান।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, আমি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দলের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। ঢাকা মহানগর কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আসা পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালনে রাজি আছি। তবে নতুন কমিটিতে একই পদে থেকে কাজ করতে চাই না।
সাদেক হোসেন ১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপর জড়িয়ে যান বিএনপির রাজনীতিতে। খোকা ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ক্যান্সারে আক্রান্ত চিকিৎসাধানী নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকার দেহে কিছু দিন আগে টিউমার ধরা পড়ে। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে গত গত ১৩ জুন সাদেক হোসেন খোকার দেহে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।


শেয়ার করুন