কক্সবাজারে ফিকহী সেমিনারে ওলামাগণ

হাদিস দিয়েই বিভ্রান্ত করছে ‘আহলে হাদিস’রা!

Cox'sBazar Picture 29.10.2015 (Fikhi Seminar)

‘জামায়াতে ইসলামি আর আহলে হাদিসের একই অবস্থা’

বার্তা পরিবেশক

‘আল্লাহর রাসূল (স.) ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন, তোমাদের কাছে এমন একটি দল আসবে যারা হাদিস দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করবে! তারা এমন এমন হাদিস দেখাবে যা তোমরাও দেখনি, তোমাদের বাপ-দাদারাও দেখেননি। আর এই যুগে আহলে হাদিস নামের দলটিই তারা, যারা মুসল্লিদের মাঝে হাদিসের নামে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন।’
এমনই দাবি করা হয়েছে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘ফিকহী সেমিনারে’। ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কক্সবাজার ইমাম পরিষদ আয়োজিত এই সেমিনারে উপরের ওই হাদিসকে ‘মুসলিম শরীফে’র হাদিস বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সেমিনারে প্রধান আলোচক ও আলোচকরা বলেন, ‘আহলে হাদিসওয়ালাদের সাথে হাত তোলা না তোলা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। আমাদের সাথে তাদের বিরোধ শরিয়তের ৪ দলিল নিয়ে। তারা (আহলে হাদিস) দুই দলিল মানেন, আর দুই দলিল মানেন না।’

তাদের মতে, আহলে হাদিসরা কুরআন ও হাদিস মানেন, কিন্তু ইজমা ও ক্বিয়াস মানেন না। অথচ আল্লাহই বলেছেন, তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম এবং পরিপূর্ণ করে দিলাম। প্রশ্ন হলো, তাহলে কিভাবে পরিপূর্ণ করা হলো! কুরআন মানতে হবে, সুন্নাহ মানতে হবে, ইজমা (ইমামদের ঐক্যমত) ও ক্বিয়াস মানতে হবে। এই চারটি মিলেই পরিপূর্ণ ধর্ম ইসলাম।

বক্তাগণ বলেন, ‘আহলে হাদিসরা শব্দ দেখে দেখে আমল করেন। এটা করলে হবে না।’
তাদের মতে, ‘আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন, মোহাদ্দিস যথেষ্ট না, ফকিহ লাগবে। আর ফকিহ হলেন তাঁরাই যাদের আমরা ইমাম বলি।’

এই সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়া আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারী। আলোচক ছিলেন ঢাকা জামেয়া রহমানিয়ার শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মনছুরুল হক, মাওলানা ওবায়দুল্লা হামজা ও কক্সবাজার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্টাতা পরিচালক মাওলানা মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক।

কক্সবাজার ইমাম পরিষদের সভাপতি ও কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ মুফতি সোলাইমান কাসেমীর সভাপতিত্বে লালদীঘির পাড়ের হোটেল প্যানোয়া চত্বরে অনুষ্টিত এই সেমিনার পরিচালনা করেন ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বদর মোকাম জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ ইউনুছ ফরাজী ও মাওলানা মুহছেন শরীফ জামান।

এছাড়াও সেমিনারের বিভিন্ন সেশনে সভাপতিত্ব করেন ধাওনখালী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুসলিম, চাকমারকুল দারুল উলুমের পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ জাকের।
সেমিনারে আল্লামা মুফতি মনছুরুল হক বলেন, ‘হাদিসের যত কিতাব লিখা হয়েছে সবই লিখেছেন মাযহাব ওয়ালারা। বুখারী শরীফের সংকলক আল্লামা বুখারী যদি ইমাম মানেন তাহলে তো তাদের (আহলে হাদিস) ভাষায় তিনি বেঈমান হয়ে গেলেন! তাহলে তাদের সংকলিত হাদিস দিয়েই কেন তারা হাদিসের সহিহ ও জয়ীফের তুলনা করছেন!’
তাঁর মতে, যারা মাওলানা মওদূদীর অনুসারী তারা মনে করেন রাসূল (স.) ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি মানা যাবে না! আর আহলে হাদিসরা বলেন, আল্লাহর রাসূলের (স.) পরে সাহাবী থেকে শুরু করে তাদের পরবর্তীরা সত্যের উপর প্রতিষ্টিত ছিলেন না!’
তিনি মনে করেন, ‘সেই হিসাবে জামায়াতে ইসলামি আর আহলে হাদিসের একই অবস্থা।
মাওলানা মনছুরের মতে, আমেরিকা হলো বিশ্ব ডাকাত। আর আহলে হাদিসরা হলো আমেরিকার বন্ধু।
তিনি বলেন, ‘মাযহাব মানা ছাড়া হাদিস মানা যাবে না। কোন ভাবেই সম্ভব না।’

বাদে আছর থেকে শুরু হওয়া এই সেমিনারে বক্তাগণ আরও বলেন, ‘সাধারণ মুসল্লিদের বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করছে আহলে হাদিসের নামে লা মাযহাবিরা। তারা ‘নামাজ শুদ্ধির’ নামে মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়াচ্ছে।’
এদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ওলামায়ে কেরামদের এগিয়ে আসতে হবে।


শেয়ার করুন