হরতাল-অবরোধে দৈনিক ক্ষতি ১৬০০ কোটি টাকা

বাংলামেইল:

Bus প্রতিদিনের হারতাল-অবরোধে অর্থনীতির মোট ক্ষতির পরিমান ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর বীমাখাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় সেই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।

সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিআইএ প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন এ কথা জানান।

বিআইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হরতাল অবরোধের কারণে বীমাখাতে দৈনিক প্রিমিয়াম আয়ে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করতে পারছে না। ফলে এ শিল্পে দৈনিক ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হরতাল অবরোধের কারণে বীমা সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি টাকার উপরে। যা সার্বিক অর্থনীতিতে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কারণ বলে মনে করছে বিআইএ।’

শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করে জোরপূর্বক নিজেদের চাহিদা পূরণের স্বভাব বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়ে তারা জ্বলাও-পোড়াও স্বভাবের আচরণ করতে থাকে। হরতাল অবরোধের কারণে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারির এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৪০০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। শুধু গাড়িই নয় বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও হরতাল অবরোধে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ দেয়া হয়েছে। যেসব ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে সেগুলোকে বীমা দাবি পূরণ করতে হচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলোকে।’ এছাড়া যেসব গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সেগুলোর বীমা দাবিও বীমা কোম্পানিগুলোকে পূরণ করতে হচ্ছে বলে জানান বিআইএ প্রেসিডেন্ট।

তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত যেসব যানবাহন ফার্স্ট পার্টি বীমা করা আছে সেগুলোর বীমা দাবিই বীমা কোম্পানিগুলো পূরণ করবে। এছাড়া যেসব যানবাহনের তৃতীয় পক্ষ বীমা করা রয়েছে সেগুলোর দাবি পূরণ করবে না বীমা কোম্পানিগুলো। এতে ক্ষতি হচ্ছেন যানবাহনের মালিকরা।’

সংবাদ সম্মেলনে বিআইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, বীমা করা যানবাহনের অধিকাংশেই ফার্স্ট পার্টি বীমা নেই। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ক্রয় করা যানবাহনের ফার্স্ট পার্টি বীমা রয়েছে।

তিনি জানান, বীমা করা যানবাহনের মধ্যে থার্ড পার্টি বনাম ফার্স্ট পার্টি হবে আনুমানিক ৮০:২০ শতাংশ। অর্থাৎ থার্ড পার্টি বীমার পরিমাণ হবে ৮০ শতাংশ এবং ফার্স্ট পার্টি বীমার পরিমাণ ২০ শতাংশ।

যানবাহনের অধিকাংশই থার্ড পার্টি বীমা হওয়ার কারণে হরতাল অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা বীমা দাবি চাইতে পারছে না। তাই নামমাত্র থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স তুলে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানায় বিআইএ।

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘দেশের বীমা খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাত থেকে প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকা প্রিমিয়াম ওঠে। হরতাল অবরোধের কারণে প্রতিদিন যে হারে প্রিমিয়াম আসার কথা সে হারে আসছে না। ফলে বীমা খাত ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আগামী দুই বছরের বিআইএ’র কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বীমা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি সম্পর্কিত কার্যক্রম, বীমা আইন বাস্তবায়নের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) সহযোগিতার পরিকল্পনা, বীমানীতির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা, বীমা আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় আনা, বিআইএ’র নিজস্ব প্লটে ভবন নির্মাণ ছাড়াও বাংলাদেশের বীমা শিল্পকে বহিঃবিশ্বের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়াসহ আন্তর্জাতিকভাবে একটি ফেডারেশন গঠন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিআইএ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নিটল ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান এ কে এম মনিরুল হক ছাড়াও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন।


শেয়ার করুন