হজ শুধু আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়, সর্বোত্তম ইবাদত

kaba-sm20160903101242হজ শব্দের অর্থ সঙ্কল্প করা, কোনো পবিত্র স্থান দর্শনের সঙ্কল্প করা। ইসলামি শরিয়তের ভাষায় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন ও নির্দিষ্ট স্থানে (কাবা-আরাফা, মুজদালিফা-মিনা) অবস্থান এবং কয়েকটি স্থানে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নির্দেশিত কয়েকটি অনুষ্ঠান (খানায়ে কাবা তাওয়াফ, সাঈ, মিনা-আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফায় রাতযাপন, মিনায় পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি, বিদায়ী তাওয়াফ ইত্যাদি) পালন করাকে হজ বলে। হজ তিন প্রকার। যেমন-

ইফরাদ : মিকাত থেকে শুধু হজের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধাকে হজে ইফরাদ বলে। যে এই নিয়ত করেন তাকে বলা হয় মুফরিদ।

কিরান : মিকাত থেকে হজ ও ওমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরা এবং হজ করাকে হজে কিরান বলে। যে এই নিয়ত করেন তাকে কারেন বলে।

তামাত্তু : মিকাত থেকে ওমরা এর ইহরাম বাঁধা। ওমরার পরে ইহরাম খুলে ফেলা। হজের সময়ে মক্কা থেকে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ বলে। যে এই নিয়ত করে তাকে মুতামাত্তে বলে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজ পালনকারীরা সাধারণ তামাত্তু হজ পালন করে থাকেন।

ওমরা বলা হয় : হিল (কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাতের স্থান) থেকে অথবা মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে ওমরা বলে। ওমরা পালনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। বছরের যে কোনো সময় ওমরা করা জায়েয। তবে পবিত্র রমজান মাসে ওমরা করা সবচেয়ে উত্তম। শুধুমাত্র জিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট পাঁচদিন ওমরা করা মাকরূহ।

হজ কেন পালন করবেন : এটি আল্লাহতায়ালার নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পরিপূর্ণভাবে পালন করো।’ আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যে এই ঘর পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে সে যেন হজ করে।’ -সূরা ইমরান : ৯৭

হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদি ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।’ –সহিহ মুসলিম শরিফ

হজরত উমর (রা.)- এ হাদিসের ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘সামর্থ্য (আর্থিক ও শারীরিক) থাকা সত্ত্বেও যারা হজ করবে না, তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচ্ছে করে। কারণ তারা মুসলমান নয়, মুসলমান নয়।’

হজ শুধু আনুষ্ঠানিকতার নাম নয় : হজ নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এর মধ্যে অনেক গুরুত্ব-মর্যাদা-কল্যাণ-নিদর্শন নিহীত রয়েছে। পবিত্র কোরআনে হজরত ইবরাহিম (আ.) হজের জন্য আহ্বান করার সময় উল্লেখ করেন, ‘মানুষ এসে দেখুক, হজ পালনে তাদের জন্য কী কী কল্যাণ নিহীত রয়েছে।’ অর্থাৎ শুধু নিদর্শনাবলির নাম উল্লেখ করলে এর কোনো প্রভাব মনে পড়ে না। হজের নিয়তে আসলেই কেবল সে অনুভব করতে পারবে।

হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হজ করার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে অনুধাবন করতে পারেন নাই যে, ইসলামে ইবাদতগুলোর মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম। যখন তিনি হজ সম্পন্ন করলেন, তখনই তিনি বুঝতে পারলেন এবং ঘোষণা দিলেন যে, হজই সর্বোত্তম ইবাদত।

একটি পূতপবিত্র ও ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ সম্পর্কে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকি থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।’ –সহিহ বোখারি শরিফ

এরূপ একটি হজ সম্পন্ন করলে একজন মানুষের হৃদয়ে বহুদিন ধরে সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে। হেরেম শরিফে কদম রেখে হাজিরা সবাই পদে পদে যেসব মহামানবদের অতীত কার্যক্রমের স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পান। যারা আল্লাহর বন্দেগি করে আনুগত্য করে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে নিজেদের সর্বস্ব কোরবানি করেছেন। এসব সুস্পষ্ট নির্দশন নানা স্থানে রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ করে একজন মুসলমান আরো তাকওয়াবান হয়ে ওঠেন।

হজের প্রভাব : এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ করার মতো সেটা হলো- একজন মুসলমান কখনও একা হজ পালন করে না। হজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার, লাখ লাখ মুসলমান একত্র হয়ে একই সময়ে হজ পালন করেন। আলাদাভাবে একজন হজ করলে তার ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানদের একত্র করে হজ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ ও মর্যাদা লাভের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ গ্রহণ করে একজন মুসলমান আরও খাঁটি মুসলমান হতে পারে।


শেয়ার করুন