হজের তাৎপর্য

hajj_104525_105323-400x258সিটিএন ডেস্ক:

হজ ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি। হজের আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন- মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। তার কোনো কাজই হিকমাত ও রহস্য থেকে খালি নয়। হজের মধ্যে মৌলিকভাবে দুটি বিষয়ই অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। হজের প্রতিটি আমলের মধ্যে এ দুটি দৃশ্যের প্রকাশ সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়, ১. হজ আখিরাতের সফরের এক বিশেষ নিদর্শন ২. হজ আল্লাহর ইশক ও মহব্বত প্রকাশের এক অনুপম বিধান ৩. হজের সফরকে আখিরাতের সফরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেননা মানুষ যখন হজের উদ্দেশে বের হয়, তখন আৎদীয়স্বজন, বাড়িঘর, বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করে তারা যেন পরকালের সফরে বের হয়। মৃত্যুর সময় যেমন বাড়িঘর, দোকান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত ত্যাগ করতে হয়, অনুরূপভাবে হজের সময়ও এ জাতীয় সবকিছু বর্জন করতে হয়। যানবাহনে আরোহন হাজীকে খাটিয়ায় সওয়ার হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইহরামের দুই টুকরা শ্বেত-শুভ্র কাপড় তীর্থপথের যাত্রীর মনে কাফনের কাপড়ের কথা জাগ্রত করে দেয়। ইহরামের পর ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলা কেয়ামতের দিন আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেওয়ার সমতুল্য। সাফা-মারওয়ার সাঈ হাশরের ময়দানে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করার মতো। সেদিন যেমন মানুষ দিশাহারা হয়ে নবী-রসুলদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করবে, অনুরূপভাবে হাজীরাও সাফা-মারওয়ার পর্বতদ্বয়ের মাঝামাঝি স্থানে দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। আরাফার ময়দানে লাখ লাখ মানুষের অবস্থান হাশরের ময়দানের নমুনা বলে বোধ হয়। সূর্যের প্রচ- তাপের মধ্যে আশা ও ভয়ের এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয় এই ময়দানে।
প্রেমাষ্পদের আকর্ষণে মাতোয়ারা হয়ে প্রেমিক ছুটে চলে জেয়ারতে বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে। কখনো মক্কায়, কখনো মদিনায়, কখনো আরাফায়, আবার কখনো মুজদালিফায় উপস্থিত হয়ে। হাজী কান্নাকাটি ও গড়াগড়ি করছে মহান আল্লাহর দরবারে। দাঁড়ানোর সুযোগ নেই তার কোথাও। এভাবে ছোটাছুটি করে উত্তপ্ত হৃদয়ের প্রশান্তি লাভ করতেই সদা সে সচেষ্ট। হজের প্রতিটি আমলেই আমরা দেখতে পাই প্রেমের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। কেননা বন্ধু-বান্ধব, বাড়িঘর, এবং আৎদীয়স্বজনের মায়া ছেড়ে প্রেমাষ্পদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং তারই তালাশে বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, এবং সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পবিত্র মক্কা ও মদিনার অলি-গলিতে দৌড়াদৌড়ি ও ছোটাছুটি করা এ একমাত্র প্রেমিকেরই কাজ। ইহরাম বাঁধা প্রকৃত প্রেমিক হওয়ার এক জ্বলন্ত নিদর্শন। না আছে মাথায় টুপি, না শরীরে জামা, না সুন্দর পোশাক, না আছে সুগন্ধি, বরং ফকিরের বেশে সদা চঞ্চল ও উদাসীন মনে সেলাইবিহীন শ্বেত ও শুভ্র কাপড় আচ্ছাদিত মুহরিমর সে কি এক অপূর্ব দৃশ্য।
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলতে বলতে ছুটে চলছে তারা মক্কা ও মদিনার পানে। ‘প্রভু, বান্দা হাজির, হাজির আমি তোমার দরবারে’- এই বলে কান্নাকাটি করে হাজী মক্কা ও মদিনায় পৌঁছে মনে করে আমি আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছি। কারণ বিচ্ছেদের অনলে দগ্ধ একটি অন্তর যখন প্রিয়তমের নৈকট্য লাভে ধন্য হয়, তখন তার আবেগ সমুদ্র কত যে তরঙ্গায়িত হতে থাকে তা প্রেমপাগল ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও বোঝা বড়ই দায়। এমনিভাবে হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া, মুলতাজাম জড়িয়ে ধরা, কাবার চৌকাঠ ধরে কান্নাকাটি করা এবং বায়তুল্লাহ শরিফের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা সবই ইশকে ইলাহির অনুপম দৃশ্য। পশু কোরবানি করে প্রেমানুরাগের শেষ মঞ্জিল অতিক্রম করে নবজাত শিশুরমতো নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসে হাজী স্বীয় বাসভবনে।
রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাহেসা ও অশ্লীল কাজ ব্যতীত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করল সে যেন এইমাত্র তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হলো; অর্থাৎ তার জীবনের গুনাহ মাফ হয়ে মাসুম শিশুর মতো হয়ে যায়। এক কথায়, হজের প্রতিটি আমল থেকেই আখেরাতের সফরের কথা ভেসে ওঠে হজযাত্রীর হৃদয়ে। এটাই হলো হজের তাৎপর্য।বাংলাদেশ প্রতিদিন


শেয়ার করুন