স্মৃতিশক্তি বাড়াবেন যেভাবে

66666666-400x279সিটিএন ডেস্ক:

চরম গতিশীলতার এই যুগে কাজ ও জীবনের চাপে পড়ে অনেকেই স্মৃতিশক্তি হারাতে বসেছেন। চারপাশে এখন অনেকের কাছেই স্মৃতিশক্তি হারাচ্ছেন বলে আক্ষেপ শোনা যায়। তবে কর্মব্যস্ত জীবনে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। এজন্য দরকার সঠিক পন্থা অবলম্বন। নিচে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার তেমনই কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো :

রুটিন করে চলুন: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একটা সহজ উপায় হল নিজের মত করে কাজের রুটিন তৈরি করা, আর সেটা পালন করা। রুটিন পালন করে কোনও কাজ করলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি মনে রাখতে পারে। আমরা যে কাজটা করেছি বা করব সে সবই যদি লিখে রাখি। কোন কাজটা করব আর কোন কাজটা করব না। বা কোন কাজটা করা হল বা করা হল না। সে সবই লিখে রাখলে সহজেই তা মনে থাকে।

‘ব্রেন গেম’ খেলুন : ভিডিও গেম নয় খেলুন ব্রেন গেম। ইন্টারনেটে ব্রেন গেমের নানা রকম ভিডিও দেখুন। দাবা খেলুন। তবে ভাল না লাগলে শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হবে বলেই ব্রেন গেম খেলব, দাবা খেলব এমনটা করতে যাবেন না।

মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখুন : রুটিন করে মস্তিষ্ককে দিনের একটা বিশেষ সময়ে ব্যস্ত রাখুন। যেমন ধরুন প্রতিদিন সকালে শব্দছকের খেলা অভ্যাস করুন। কিংবা ছেলে মেয়েদের পড়ানোর ফাঁকে নিজে একবার নামতটা মুখস্থ করুন

প্রচুর পানি গ্রহণ করুন : খাদ্যাভাসের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির দারুণ একটা সম্পর্ক রয়েছে। ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। গরুর দুধ, জল বেশি করে খান।

ভিন্ন পথ অনুসরণ করুন : একই পথে রোজ বাড়ি না ফিরে একটু অন্য পথে ফিরুন। একঘেঁয়েমি কোনও কাজ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অফিস কিংবা কাজ থেকে বাড়ি ফিরতে অন্য কোনও পথে বাড়ি ফিরলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

নতুন কিছু শিখুন : নতুন কোনো কাজ শেখার চেষ্টা করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। এই যেমন ধরুন আপনি হয়তো কাগজের প্লেন তৈরি করতে জানেন না। সেটা শিখে নিয়ে তৈরি করুন। কিংবা নতুন কোনো কাজ করতে শুরু করুন। স্মৃতিশক্তি এতে বাড়বে। মানসিক চাপ থেকে এড়িয়ে চলুন। মানসিক চাপ বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। বন্ধু ও পরিচিতজনের সংখ্যা বাড়ান এবং তাদের সঙ্গে গড়ে তুলুন গঠনমূলক সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক।

কৌশলী হোন : যখন কোনো জিনিস মনে করবেন তখন বাঁ হাতের আঙুলগুলো মুঠো করে রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁ হাতে মুঠো করলে মস্তিষ্কে এমন একটা বার্তা যায় যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ফোন নম্বর মনে রাখার এটা একটা দারুণ অস্ত্র। বাঁ হাত মুষ্টিবদ্ধ।

ঘুমানোর আগে করণীয় : রাতে শোওয়ার আগে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। মনে করার চেষ্টা করুন সারাদিন কী করলেন। তবে হ্যাঁ, স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। নির্ঘুম শরীর অনেকাংশেই মনের ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। তাই ঘুম হতে হবে ঠিকঠাক।
স্মৃতিশক্তি তৈরি হয় এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাতে জড়িত থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন যোগাযোগ-প্রক্রিয়া। স্মৃতিশক্তি সাধারণত দু’ধরনের (১) স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি ও (২) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি। (১) স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি : যখন মস্তিষ্ক তথ্য ধরে রাখে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য, তাকে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বলে। (২) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি : মস্তিষ্ক যখন উদ্যমের মাধ্যমে ক্রিয়া করে, হতে পারে সেটি সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এবং যা নিজের কাছে খুবই অর্থবহ, সেগুলোই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তির রূপ নেয়। স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের কিছু টিপস মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন : মাংসপেশির শক্তির মতো স্মৃতিশক্তিও ‘ব্যবহার করুন অথবা হারান’-এ নীতিতে চলে। আপনি যত মস্তিষ্কের ব্যবহার করবেন, আপনার স্মৃতিশক্তিও তত ধারালো হবে। ‘নিউরোবিক’ ব্যায়াম যেমন চোখ বন্ধ করে গোসল করা বা ড্রেসআপ করা, নতুন খেলা শেখা, খবরের কাগজে নতুন নতুন পাজল বা ক্রসওয়ার্ড চর্চা করা, সম্ভব হলে প্রতিদিনই। মেনোযোগ দিন : আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মস্তিষ্কে লেখা হতে হবে আর যদি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন, মস্তিষ্কে লেখার কাজটি হবে না। মস্তিষ্কের যথাযথ স্থানে একটি তথ্যেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় আট সেকেন্ড সময় লাগে। তাই বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়, এটি পরিহার করতে হবে। আপনার শেখার ধরন বুঝুন এবং সেভাবে শিখুন : অধিকাংশ মানুষ দেখে শেখে, তারা উত্তমভাবে শেখে পড়ে পড়ে অথবা যা দেখার তা দেখে দেখে; কিন্তু কেউ কেউ আছে, তারা ভালো শেখে শুনে শুনে, যদি তারা ক্লাসের লেকচার অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করে বারবার শোনে বা দেখে, তাহলে ভালো মনে রাখতে পারে। যত বেশি সেন্স ব্যবহার করা যায় ব্যবহার করুন : আপনি দেখে দেখে শেখেন ভালো, শব্দ করে পড়ুন, তাতে আপনার আরও একটি সেন্স শেখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া শব্দ করে পড়াটা যদি ছন্দ হয়, তাহলে আরও ভালো। প্রতিটি তথ্য তার রং, আকার, গঠন ও গন্ধ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। পড়ার পর হাতে লিখলে তা স্মৃতি শক্তিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নতুন তথ্যকে আপনার পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করুন। তথ্যকে সংগঠিত করুন : বিষয়গুলো লিখুন, জটিল বিষয়গুলোর নোট নিন এবং পরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস করুন। চেষ্টা করুন এবং ব্যাখ্যা বের করুন : অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণার ওপর জোর দিন, বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না। জটিল বিষয়টি অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করুন। বারবার তথ্যের রিহার্সেল করুন এবং অতিরিক্ত শিখুন, যেদিন বিষয়টি শিখলেন, সেটি আবার ঝালাই করুন এবং মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে আবার ঝালাই করুন। জমিয়ে না রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করে, তারা ভালো মনে রাখতে পারে। প্রাত্যহিক পড়ার রুটিনে পরিবর্তন আনুন : মাঝেমধ্যে প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রাতে পড়াশোনা করে পরদিন সকালে বিষয়টি রিভিউ করুন। স্মৃতিশক্তি-সহায়ক পদ্ধতি অবলম্বন করুন : এ পদ্ধতিতে কোনো বস্তু মনে রাখার জন্য একটি সূত্র (ক্লু) হিসেবে কাজ করে। যেমন ছবি, বাক্য বা শব্দ। ছড়া বা গানের আকারেও কোনো বিষয়বস্তু মনে রাখা যায়। কৌতূকের উদ্রেক করে (জোকস) এমন সব বিষয়ের মাধ্যমেও কঠিন বিষয়বস্তু মনে রাখা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবান্ধব অভ্যাসগুলো লালন করুন (ক) নিয়মিত শরীরচর্চা করুন : ব্যায়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়, বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। যেগুলো স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। (খ) ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন : কর্টিসল (একটি স্ট্রেস হরমোন) মস্তিষ্কের হিপপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদি স্ট্রেস দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্ট্রেস মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। (গ) ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন : স্মৃতিশক্তি সংহত করতে ঘুম অত্যাবশ্যক। ঘুমের সমস্যা যেমন ‘ইনসোমনিয়া’ আপনাকে ক্লান্ত রাখবে এবং দিনের বেলায় আপনার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। (ঘ) ধূমপান থেকে বিরত থাকুন : ধূমপানে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে স্মৃতিহারা হতে পারেন এবং ধমনিকে সরু করে মস্তিষ্কের অক্সিজেন-প্রবাহ কমিয়ে দিয়ে স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিতে পারে। (৫) পুষ্টি ও স্মৃতিশক্তি : ফল, শাকসবজি, আবরণী সমেত দানাজাতীয় শস্য ও স্বাস্থ্যবান্ধব øেহজাতীয় (শস্যদানার তেল, মাছের তেল) খাদ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারী গুণ আছে। পাশাপাশি এগুলো স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটায়। নিচে কিছু স্মৃতিশক্তি-সহায়ক খাদ্য-উপাদান দেয়া হলোভিটামিন ‘বি’-৬, ‘বি’-১২ এবং ফলিক এসিড আছে পালংশাক ও গাঢ় সবুজ শাক, ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, স্ট্রবেরি, বাঙ্গি, তরমুজ, শিমের কালো বীচি এবং অন্যান্য ডালজাতীয় শস্যদানা, টকজাতীয় ফল ও সয়াবিনে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসমূহ আছে জাম, মিষ্টি আলু, লাল টমেটো, পালংশাক, ব্রকলি, সবুজ চা, বাদাম ও বীচি, টকজাতীয় ফল এবং কলিজায়। তাই বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও ফল খান এবং সঙ্গে উদ্ভিদজাত তেল দিয়ে তরকারি রান্না করে সেটা খান। প্রাণিজ তেল আপনার ধমনি সরু ও বন্ধ করে দিতে পারে, এগুলো পরিহার করলে তবেই মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।


শেয়ার করুন