দু’শ রাউন্ড গুলি বর্ষণ, গুলিবিদ্ধ ৮

সোনাদিয়ায় দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধ

arms-ft-plc-asamiশাহেদ ইমরান মিজান

মহেশখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায় বিবদমান দু’জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সোনাদিয়ার জলদস্যু সম্রাট নাগু মেম্বার বাহিনী ও তার ভাজিতা আরেক জলদস্যু জাম্বু এবং তার শিষ্য সরওয়ার বতইল্যা বাহিনীর মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্বপাড়ায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষে অন্তত দু’শ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে নারী পুরুষসহ উভয় পক্ষের অন্তত আটজন। তাদের মধ্যে রয়েছে পূর্বপাড়ার বদি আলমের স্ত্রী ছাবুকা (৩৫), গুরামিয়ার পুত্র খোকন (১৭), ইউনুষ (৪৫) ও তার পুত্র কোরবান আলী (২৫) এবং শামসুল আলম (৪০)। তাদেরকে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকীদের পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাদিয়ার চরে মাছ ধরা কেন্দ্র করে নাগু মেম্বার ও জাম্বু বাহিনীর দু’জন লোকের কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনাকে উভয় অন্তত ৬০ থেকে ৮০জন সন্ত্রাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে সম্মুখ সংঘর্ষ না হলেও দু’বাহিনী গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে এই গোলাগুলি চলে। লোকালয়ে প্রকাশ্যে গোলাগুলি চলায় আতঙ্কিত হয়ে স্থানীয় সাধারণ লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি। অনেকে আতঙ্কে এলাকা থেকে দূরে সরে যায়। এই ঘটনার পরও এলাকায় থমথমে পরিস্থিত বিরাজ করছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল চন্দ্র বণিক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশ গেলে দু’সন্ত্রাসী বাহিনী পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, দু’বাহিনী গোলাগুলিতে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। একই সাথে দু’বাহিনীই ভাড়াটে সন্ত্রাসী ব্যবহার করেছেন। কুতুবজোমের কালামিয়ার দোকান, বটতলা, ঘটিভাঙাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা ভাড়ায় গিয়ে গোলাগুলিতে অংশ নেন। তবে এর মধ্যে নাগু মেম্বারের পক্ষে বেশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী ছিলো বলে জানা যায়।
জানা যায়, জলদস্যুদের অভয়ারণ্য খ্যাত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায় আবদুল গফুর নাগু মেম্বার ও জলদস্যু জামু-সরওয়ার পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে গত ১৫ দিন ধরে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের এই দ্বন্দ্ব। এই কারণে এই দু’দস্যু বাহিনী ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্রও মজুদ করেছে। একই সাথে ভাড়াটে সন্ত্রাসী মজুদ করে। এই ঘটনায় সেই থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে আসছিল।
স্থানীয়রা লোকজন জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে আবদুল গফুর নাগু এবং তার ভাতিজা জলদস্যু জাম্বু-সরওয়ার পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেন। দু’পক্ষই ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এক প্রকার রণপ্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান নিয়ে থাকে। ১৫ দিনের রণপ্রস্তুতির পর বুধবার সকালে গোলাগুলিতে জড়িয়ে দু’দস্যু বাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে জলদস্যু গড়ফাদার আবদুল গফুর নাগু এবং তার ভাতিজা জলদস্যু সর্দার মোশারফ জাম্বু ও সরওয়ার বতইল্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে এই বিভাজনের সূত্রপাত হয়। এই দ্বন্দ্ব নিয়ে দু’টি পক্ষে ভাগ হয়ে যায় নাগু ও জাম্বু-সরওয়ার। এর সূত্র ধরে বিগত এক বছর আগে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। দীর্ঘ সময় এক সাথে সাগরে ডাকাতি চালালেও দ্বন্দ্বের কারণে দু’ভাগে ভাগ হয়ে ডাকাতি চালাচ্ছে তারা। এর মধ্যে জাম্বু পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় তার বাহিনীর হাল ধরে সরওয়ার বতইল্যা। অন্যদিকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপে পড়ে যাওয়ায় নাগু মেম্বার বাহিনীর হাল ধরে তার পুত্র নকিব। এই বাহিনী ‘বিচ্ছু বাহিনী’ নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, দু’গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে অশান্ত হয়ে উঠেছে সোনাদিয়া। দু’বাহিনীর প্রায় সময় সশস্ত্র মহড়া, হুমকি-ধমকি নানা কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত রয়েছে। এই কারণে অনেকে বাড়ি থেকে ঠিকমতো বের হচ্ছে না। এতে করে স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ব্যাঘাত ঘটছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ মে দৈনিক বাঁকখালীতে ‘সোনাদিয়ায় দু’পক্ষের রণপ্রস্তুতি’ শিরোনামে এ সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।


শেয়ার করুন