সোনাদিয়ায় একদিন

3e31c851-1f2f-4cb1-9630-b3ab49790de3আতিকুর রহমান মানিক
মসজিদের শহর ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, আমের নগরী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী, কমলালেবুর নগরী সিলেট এবং খেজুর রসের শহর যশোর । কিন্তু পত্রিকার শহর? হ্যাঁ কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রায় ২০টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। আবার এর পাশাপাশি অনলাইন পত্রিকার সংখ্যাও কম নয়, ৪৫ টি। প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে সমৃক্ত সাংবাদিকরাই অনলাইনেরও সাংবাদিক। এই অনলাইন সংবাদিকদেরই সংগঠন “অনলাইন রিপোটার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (ওরাক)”র বিশেষ সভায় মাসখানেক আগে পরিকল্পনাটির প্রসব বেদনা উঠে, তা হল “সোনাদিয়া ভ্রমন”। মহেশখালী উপজেলাধীন সমুদ্র গর্বিনী সোনাদিয়া যাত্রার দিনক্ষন ঠিক হয় ২১ নভেম্বর শনিবার। শুক্রবার রাতভর বাজার সওদপাতি সেরে যাত্রার প্রাক-প্র¯ত্ততির পর শুক্রবার ভোরে নুনিয়াছড়াস্থ বিআইউব্লিউ জেটিঘাট থেকে যাত্রার কথা। যথাসময়ে ওরাক’র অস্থায়ী কার্য্যালয়ে উপস্থিতির পর যাত্রা শুরুর তোড়জোড়। কক্সবাজারে অনলাইন সাংবাদিকতার পথপদর্শক সিবিএন সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, হিমছড়ি সম্পাদক হাসান ভাই, দৈনিক সৈকত’র নির্বাহী সম্পাদক আনছার ভাই, দৈনিক ইনানীর মফঃস্বল সম্পাদক ইমাম খাইর, সিটিএন প্রধান সম্পাদক সরওয়ার ভাই, নির্বাহী সম্পাদক ইসলাম ভাই, বাংলা মেইল’র আবদুর রহমান ভাই, দৈনিক বাঁকখালীর শাহেদ ইমরান মিজান, আমাদের কক্সবাজার’র শাহ আলম, কক্সবাজার আলোর ছৈয়দ আলম, সমুদ্রকন্ঠ’র মহি উদ্দিন মাহি, ও সাগরদেশের ইমরান ফারুক আনিকসহ ২০/২৫ জন সাংবদিকের বিশাল বহর নিয়ে আগে থেকে রিজার্ভ করে রাখা বোট রওয়ানা দিল সোনাদিয়ার উদেশ্যে। বাঁকখালী নদীর মোহনা পেরিয়ে পশ্চিমে ঘন্টাখানেক নৌ-যাত্রার পর সোনাদিয়া নেমে সকলের চোখ জুড়িয়ে গেল। ঘন ঝাউবাগানের বাহার, ইতঃস্তত বালিয়াড়ি, শুটকিপল্লী, দৃষ্টিনন্দন সৈকত ও সহজ-সরল অধিবাসী মিলিয়ে আসলেই অপরূপ এক দ্বীপ। পৌঁছেই ইসলাম ভাইয়ের নেতৃত্বে কয়েকজন রান্নার দায়িত্ব নিলেন। আকতার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা বেরিয়ে পড়লাম দ্বীপ পরিক্রমনে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত আরো কয়েকটা পিকনিক পার্টিও দেখা গেল। চোখজুড়ানো নারকেল বাগান, চিংড়িঘের, বালিয়াড়ি, একমাত্র প্রাইমারী স্কুল, লোকালয়, সৈকতে জালটোনা, মাছ ধরা ও অন্যান্য দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে টেরও পাইনি। এর মধ্যেই খাবার রেডি। দেশী মুরগী, চান্দা মাছ, গরু ভূনা, ছাগলের গোশত ও অন্যান্য আইটেমের সাথে ছিল “সাগরকন্যা”র সৌজন্যে স্পেশাল শুটকি আইটেম (না এখানে কোন সাগরকন্যা অথবা মৎস্যকন্যা সাগর থেকে উঠে আসেনি, আমাদের সহযাত্রী সাংবাদিক আবদুর রহমান ভাইয়ের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাগরকন্যা )। এ শুটকির স্বাদ ছিল অমৃতের মত। সবাই ভরপেট খেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে এক্কেরে শেষে বিকেল। আবারো ফিরতে হবে ব্যস্ততার শহর কক্সবাজারে। কি আর করা, গাঁট্টি-বোঁচকা বেধে সবাই আবারো উঠে পড়লাম বোটে। কক্সবাজার মুখী চলমান বোটেই অনুষ্ঠিত হল বিশেষ র‌্যাফেল ড্র। পুরস্কার জিতলাম ও হারালাম সবাই। সোনাদিয়ায় কাটানো একটা দিন সোনালী স্মৃতি হয়েই রইল সবার মনে। ফিরতি পথে নুনিয়াছড়া পৌছে আনছার ভাইয়ের বাসায় চায়ের দাওয়াত। কিন্তু চা আসল অনেক পরে। তার আগে ভাবীর দক্ষ হাতে তাৎক্ষণিক বানানো বিভিন্ন আইটেমের ভরপেট নাস্তা খেয়ে সবাই টাইট। এভাবেই সমাপ্ত হল স্মৃতিময় একটি দিন। আমাদের এতকাছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত একটা দ্বীপের কথা হয়তো অনেকের অজানা। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ, মরিশাশ দ্বীপপূঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্ররের হাওয়াই দ্বীপ ও নিউজিল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জসহ বিশ্বের অপরাপর পর্যটন স্পটের চেয়ে সোনাদিয়া অনেক সুন্দর ও অন্যন্য। যথাযথ উদ্যোগ নিলে অপার পর্যটন সম্ভাবনার সোনাদিয়া দ্বীপ হতে পারে দেশের পর্যটন অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখানে রয়েছে পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা।


শেয়ার করুন