সৈয়দ আশরাফের উত্থান-পতন

113750_1সিটিএন ডেস্ক:
আওয়ামী লীগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অবদান অস্বীকার করার মতো লোক কমই ছিল। বিশেষ করে সেনা-সমর্থিত সরকারের সময় দলে তার অবদান নিয়ে বিতর্ক নেই। আওয়ামী লীগকে সর্বশেষ দুই দফায় ক্ষমতায় আনার অন্যতম কারিগর মনে করা হয়ে থাকে তাকে।

সৈয়দ আশরাফের সেই ইমেজের কিন্তু ক্ষয় হতে শুরু করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই।

মন্ত্রণালয় এবং সাংগঠনিক কাজে সময় না দেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠে, বাসায় বসেই মন্ত্রণালয় চালোনোর। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ‘সেমি-অফিসে’ পরিণত হয় তার বাসা। এতে অসন্তুষ্ট ছিলেন সংশ্লিষ্ট আমলারা।

তবে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ অবশ্য এসব অভিযোগকে কমই পাত্তা দিতেন। কিন্তু এসব অভিযোগ এক সময় দল এবং সরকারে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে পরিণত হয়। তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

মন্ত্রণালয় এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সময় না দেয়া, নেতাকর্মীরা তার দেখা না পাওয়া, কারো ফোন রিসিভ না করা- এসব ঘটনায় সৈয়দ আশরাফের ওপর নাখোশ ছিলেন খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি তিনি নেতাকর্মীদের সামনেই প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ না থাকায় ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সৈয়দ আশরাফকে অব্যাহতির সারসংক্ষেপ তৈরি করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বলেন তিনি। আর এতেই সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে।

কিন্তু বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সৈয়দ আশরাফকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না বললে এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে চলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশরাফ সমর্থকদের দৌড়-ঝাঁপ।

এছাড়া ওইদিন সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, দপ্তর হারানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদে কোনো রদবদল হচ্ছে কিনা, এমন খবরও তার জানা নেই।

অবশেষে বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করলে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়। আর হয়তো আওয়ামী লীগের হয়ে আর ‘পূর্ণ-মন্ত্রিত্ব’ পাওয়ার সম্ভাবনাও এখানেই শেষ হলো এই রাজনীতিকের।

এদিকে সৈয়দ আশরাফের জন্য হয়তো আরো দুঃসংবাদ আসতে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, দলের সাধারণ সম্পাদক পদে তিনি যে হ্যাট্রিক করতে পারছেন না তা অনেকটাই নিশ্চিত।

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাট্রিক করার রেকর্ড রয়েছে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানার নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদের।

শেখ হাসিনার সঙ্গে পর পর দুই দফায় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তিনজন- প্রয়াত জিল্লুর রহমান, সাজেদা চৌধুরী ও সৈয়দ আশরাফ। চলতি বছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে আশরাফ পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

সৈয়দ আশরাফ ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল ও প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার হলে মুকুল বোস ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

কিন্তু মুকুল বোস শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নাজেহাল করে। শেখ হাসিনার ধানমন্ডি কিংবা দলীয় কার্যালয়ে তাকে ঢুকতে দেবে না এমন ঘোষণা দেয় নেতাকর্মীরা।

এই পরিস্থিতিতে দলটির তিন নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ লন্ডন থেকে দেশে পাঠান শেখ রেহানা। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করে নেন। এর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবদুল জলিলকে আর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সৈয়দ আশরাফই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

পরে ২০০৯ সালের অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১২ সালের কাউন্সিলে পুনরায় তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


শেয়ার করুন