“প্রাসেট” ভাসানো অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সৈকতে রাখাইন সম্প্রদায়ে মিলন মেলা

20151029_162959নিজস্ব সংবাদাতা।

 ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল বেলায় কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে মিলন মেলা বসেছিল রাখাইন সম্প্রদায়ে। এদিন অরহৎ উপগুপ্ত ভিক্ষুকে বন্দনার জন্য কাগজ ও বাঁশের তৈরী সুদৃশ্য প্রাসেট ভাসানো উপলক্ষ্যে কক্সবাজার শহরে রাখাইন বাসিন্দাগণ মিলিত হয়েছিল সৈকতে ডায়াবেটিক পয়েন্টে। বেলা ৩.০০টার দিকে আ¹মেধা ক্যাং চত্বর হতে ওয়াগ্যোয়ে পোয়ে উদযাপন কমিটি ও রাখাইন ষ্টুডেন্ট কাউন্সিল এর উদ্যোগে বৌদ্ধ বিহারে শীর্ষদেশ আদলে তৈরিকৃত সুদৃশ্য প্রাসেট দুটি নিয়ে শোভাযাত্রা শুরু করে। সকল বয়সী রাখাইন নারী পুরুষ অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি শহরে প্রধান সড়ক দিয়ে প্রাসেট দুটিকে দীর্ঘ রশি দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে থাকে সৈকতে ডায়াবেটিক পয়েন্টের দিকে।

রাখাইন সম্প্রদায়ে ঐতিহ্যবাহী বাদ্য বাজনা ও গানের মাধ্যমে চারিদিককে মুখরিত করে শোভাযাত্রাটি চলার সময় আশে পাশে কৌতুহলী মানুষজন থমকে পড়ে। শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়কে আইবিপি সড়ক মোড়ে এসে উপস্থিত হলে শহরে মাছবাজার রাখাইন পাড়াবাসী উদ্যোগে নির্মিত অপর দুটি প্রাসেট সহ আরও একটি শোভাযাত্রা দল এসে মিলিত হয়। তখন শোভাযাত্রা মিছিল ব্যাপকতা লাভ করে। ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসে উপস্থিত হলে সেখানে মাছবাজার রাখাইন পাড়া নিবাসী মহিলাদের উদ্যোগে সবাইকে শরবত দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। সেখানে বেশ কয়েটি ফানুষও উড়ানো হয়।

সবশেষে সী সেইভ লাইফ গার্ড, রবি ও ইয়াসির লাইফ গার্ডের সহায়তায় প্রাসেট সমূহকে গভীর সাগরে ভেসে দেওয়া হয় জগতের সকল প্রাণীর সূখের প্রত্যাশায়, অরহৎ উপগুপ্তকে বন্দনা করে। উল্লেখ্য এতদঞ্চলে রাখাইন শাসনামলে রামু প্যান ওয়া প্রদেশে প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। তখন রাখাইন রাজের প্রতিনিধি হিসেবে প্যান ওয়া অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন প্যান ওয়া ঝা। তাঁর শাসনামল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায় অরহৎ উপগুপ্ত ভিক্ষুকে বন্দনার নিমিত্তে নদী, খাল ও সাগর মোহনায় প্রাসেট ভাসানো উৎসব পালন করে আসছে। কক্সবাজার শহরবাসী কক্সবাজার সৈকতে এ অনুষ্ঠান পালন করলেও জেলায় অন্যান্য স্থান অর্থাৎ সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, খুরুস্কুল এবং মহেশখালী নিবাসী রাখাইনগণ সাগরে মহেশখালী চ্যানেলে, চকরিয়া উপজেলার হারবাং এর অধিবাসী রাখাইনগণ হারবাং ছড়া খালে, মানিকপুরে রাখাইনগণ মাতামুহুরী নদীতে, টেকনাফ উপজেলা নিবাসী রাখাইনগণ নাফ নদীতে প্রাসেট ভাসিয়ে এ উৎসব পালন করেন প্রবারণা পূর্ণিমা অথবা পরের দিনে।

আর রাখাইন বংশজাত বান্দরবান ও খাগড়ছড়ি জেলার মারমা সম্প্রদায়ও নিকটবর্তী নদী ও ছড়া সমূহে এধরনের অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকেন। এছাড়া বার্মা, লাওস, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণও আড়ম্বরপূর্ণভাবে এ উৎসব পালন করে থাকেন, প্রবারনা তিথিতে। সমূদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিংঅং, রাখাইন ডিভেল্যাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ক্যচিং, মং ওয়েন মেম্বার প্রমূখ। আয়োজনকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বাতœক সহযোগিতা প্রদান করায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ প্রশাসন, সদর মডেল থানা ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং ইয়াসির লাইফ গার্ড, রবি ও সী সেইফ লাইফ গার্ড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ওয়াগ্যোয়ে পোয়ে উদযাপন কমিটি।


শেয়ার করুন