সৈকতে বালিয়াড়ি দখল ওপেন সিক্রেট!

moinnnnnnn-620x330বিশেষ প্রতিবেদক :

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ যেনো ওপেন সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধীরে চলো নীতিতে চলছে এই দখলবাজি।  কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যতঃ কোন দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ না নেয়ায় দখলবাজরা কোনভাবেই তোয়াক্কা করছেন না প্রচলিত আইন কানুন। আর সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৌশলে চলছে সৈকতের বালিয়াড়ি দখল। গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। কোথাও বালিয়াড়ি দখল করে ঝুঁপড়ি দোকান আবার কোথাও নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট ছোট স্থাপনা। কোথাও আবার ঝাউবনের ভিতরে ঘরবাড়ি তৈরি করে দখল করা হয়েছে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি। এর ফলে একদিকে যেমন শ্রীহীন হচ্ছে অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত অন্যদিকে দখলদারদের কবলে পড়ে ছোট হয়ে আসছে সৈকতের বালিয়াড়ির সীমানা। দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের ডায়বেটিকস পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের অনেকাংশ বালিয়াড়ি দখল হয়ে গেছে। আর এতে কেউ ঝুঁপড়ি ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে আবার কেউ কেউ স্থাপনা নির্মাণ করে দখলবাজি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকতে বালিয়াড়ি দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু এসব অভিযান ফলপ্রসূ হচ্ছে না। সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টস্থ শ’খানেক ঝুঁপড়ি দোকান যেগুলো ভ্রাম্যমান হকার হিসেবে অবিহিত হয় এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত বারে বারে অভিযান চালালেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অতীতের সব দখলবাজদের হার মানিয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে প্যাসিফিক ক্যাফে ও ডিভাইন গ্রুপ। সৈকতের কলাতলী পয়েন্টস্থ ওশ্যান প্যারাডাইজের পেছনে প্যাসিফিক ক্যাফে ও ডিভাইন গ্রুপের দখলবাজি সবকিছুকেই হার মানিয়েছে। জানা যায়, ইতোপূর্বে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত এই এলাকায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজন যুবককে আটক করে। এছাড়াও জরিমানা করে লঘু শাস্তি প্রদান করা হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু এতে কোনভাবেই টনক নড়েনি প্রকৃত দখলবাজদের। সূত্রমতে, সম্প্রতি উক্ত এলাকায় আবুল কাসেম নামে এ ব্যক্তিকে বালিয়াড়ি দখলের অভিযোগে শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দখলদাররা অধরাই থেকে যান। এর পর থেকে কোন এক রহস্যজনক কারণে প্যাসিফিক ক্যাফে ও ডিভাইন গ্রুপের বালিয়াড়ি দখলের ব্যাপারে প্রশাসন নিরব রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে প্যাসিফিক ক্যাফে উন্মুক্তভাবে দখলবাজি করছে। তারা অনেকটা ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করেই দখলে অব্যাহত রয়েছেন। এছাড়াও প্যাসিফিক ক্যাফের পার্শ্ববর্তী ডিভাইন গ্রুপও স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বালিয়াড়ি দখলে সামিল হয়েছেন। সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা এম. মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক ক্যাফে। অন্যদিকে ডিভাইন গ্রুপের মূল মালিক ঢাকার বাসিন্দা। তবে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মালিকপক্ষের নাম্বার হিসেবে পাওয়া যায় খালেদ নামে এক ব্যক্তির খোঁজ। কিন্তু খালেদের মোবাইল ফোন নাম্বার ০১৯৭২০৯০৯১০ তে বারে বারে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। কথা হলে ট্যুরিষ্ট পুলিশের ওসি সত্যজিৎ বড়ুয়া বলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সাধ্যমত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী সৈকতের বালিয়াড়ির উপর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ভ্রাম্যমান আদালতের সহযোগী হয়ে অভিযান চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, যদি কোথাও বালিয়াড়ি দখলের চেষ্টা করা হয় তাহলে তা শক্তহাতে দমন করা হবে।
কথা প্রসঙ্গে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যা অপকর্ম হচ্ছে এর বেশিরভাগই সংঘটিত হয় সৈকত এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো থেকে। তিনি মনে করেন, যদি ভ্রাম্যমান আদালত সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পুরো সৈকত এলাকাকে দখলমুক্ত ও ঝুঁপড়িগুলো উচ্ছেদ করতে পারে তাহলে শহরে অনেকাংশ অপকর্ম কমে আসবে। তিনি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন  বলেন, সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক। এনিয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, সৈকত এলাকায় কাউকে দখলদারিত্ব করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ লক্ষ্যের অগোচরে সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ি দখলের চেষ্টা করে তাহলে এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে বলে জানান। তিনি এক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে বলেও জানান।


শেয়ার করুন