সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ১০তলা সার্কিট হাউস বানাবে প্রশাসন

মঈনুল হাসান পলাশ/আমিনুল ইসলাম মোহাম্মদ রাশেদ ॥
কক্সবাজার শহরে জনপ্রিয় সৈকত লাবণী পয়েন্টে জেলা পরিষদের প্রস্তাবিত শিশুপার্ক বাতিল করে সুউচ্চ ১০ তলা সার্কিট হাউস নির্মাণ করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
এই সার্কিট হাউস নির্মাণ করতে ইতিমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের তরফ থেকে প্রথম এই প্রস্তাবনা আসে।
সে সময় লাবণী পয়েন্টে সার্কিট হাউস নির্মাণ করা সমীচীন হবে না বলে মতামত দিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল(অব.) ফোরকান আহমদ।
লাবণী সৈকতে জেলা পরিষদের উদ্যান এবং প্রস্তাবিত শিশু পার্ক প্রকল্প বাতিল করে সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগকে সমর্থন করেন না কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,লাবণী সৈকতে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন উদ্যানটিতে পর্যটক এবং স্থানীয় শিশু-কিশোরদের জন্য একটি মিনি শিশু পার্ক করার প্রস্তাবনা আমরা বহুদিন আগেই দিয়েছিলাম। সেখানে আরেকটি অংশে থাকবে স্বাস্থ্যকর উদ্যাণ।
তিনি আরো জানান, সাবেক পূর্তমন্ত্রী মোশাররফের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে,লাবণী সৈকত এই ১০ তলা সার্কিট হাউস নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নয় বলে তাকে জানিয়েছিলেন।
বরং সেটা অন্যকোনো স্থানে নির্মাণ করে লাবণী সৈকত এবং সংলগ্ন স্থান উন্মুক্ত রাখাই হবে সমীচীন।
এদিকে সরেজমিনে লাবণী সৈকতের জেলা পরিষদের উদ্যাণে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে জেলা পরিষদের বড় আকারের সাইনবোর্ডটি নেই। সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বিষয় জানালে,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন,উদ্যানের দায়িত্বে থাকা মালীর কাছে খোঁজ নেবেন।
এদিকে পর্যটন শিল্প উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতিক কর্মী আবু শাহাদাত মো:সায়েম ডালিম বলেন,এক সময় উম্মুক্ত বিচের লতাপাতা দৃষ্টি নন্দন ছিল,যা পর্যটককের নিকট আর্কষনীয় ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন বাহিনীর স্থাপনা,ঝুপড়ি দোকান ও সাগরের ভাঙ্গনে উম্মুক্ত বিচের পরিধি কমে আসছে। সেখানে এসব স্থাপনা হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।আমরা বেঁচে থাকতে নিজ শহরের এমন ক্ষতির কাজ কাউকে করতে দিবো না।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন,পরিকল্পিত কক্সবাজার হওয়ার দরকার ছিলো।কিন্তু কেউ তা বাস্তবায়ন করছে না।এখন থেকে পরিকল্পনার বাহিরে এমন কোনো কিছু করতে দেয়া হবে না যেহেতু এটা পর্যটন শহর।
কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ বলেন,পর্যটন নির্ভর নয় আমরা এমন স্থাপনা চাইনা ।পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি বিচ থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত রাখতে হবে,সেখানে কোনো স্থাপনা আমরা কক্সবাজারবাসি মানিনা, মানবোও না। পর্যটনের অনেক জায়গা বেহাত হয়েছে। এখন থেকে এসব করতে দেয়া না বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন প্রথমে লাবণী পয়েন্টস্থ পার্কে কোনো সার্কিট হাউজ হচ্ছে না বলে জানান। কক্সবাজারের সচেতন সমাজের তরফে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে তাকে জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক জানতে চান, কক্সবাজারের সুশীল সমাজের সবাই তার কাছে আসে,তাদের মধ্যে কে এই তথ্য দিয়েছে?
তিনি বলেন সরকার সিদ্ধান্ত দিলে সেখানে সার্কিট হাউজ হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তাকে জানানো হয়,কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী সেখানে শিশুপার্ক করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ডিসি মোঃ কামাল হোসেন বলেন, মোস্তাক সাহেব সেখানে কিভাবে শিশুপার্ক করবেন? এটা তো তার জায়গা না। খাস খতিয়ানমূলে এই জায়গা জেলা প্রশাসনের।


শেয়ার করুন